আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব
From Wikipedia, the free encyclopedia
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব (International relations theory) হচ্ছে তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক পাঠ। এটি একটি ধারণাগত কাঠামো দান করবার চেষ্টা করে যার উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়।[1] ওলে হলস্টি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বসমূহ রঙ্গিন রোদচশমার মত কাজ করে, যা পরলে পরিধানকারী কেবল সেই তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ই দেখতে পারে; যেমন বাস্তববাদীগণ একটি ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন যা নির্মাণবাদীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তিনটি সর্বোচ্চ প্রভাবশালী তত্ত্ব হচ্ছে বাস্তববাদ, উদারতাবাদ ও নির্মাণবাদ।[2] কখনও কখনও কেওহেন ও নিয়ে এর তৈরি প্রতিষ্ঠানবাদকেও উদারতাবাদের থেকে ভিন্ন প্যারাডাইম হিসেবে আলোচনা করা হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বসমূহকে "দৃষ্টবাদী/বিচারবাদী" তত্ত্বসমূহ এবং "উত্তর-দৃষ্টবাদী/প্রতিফলনবাদ" তত্ত্বসমূহে ভাগ করা হয়। "দৃষ্টবাদী/বিচারবাদী" তত্ত্বসমূহ রাষ্ট্র বিষয়ক বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করে, "উত্তর-দৃষ্টবাদী/প্রতিফলনবাদী" তত্ত্বসমূহ নিরাপত্তার সম্প্রসারিত অর্থ নিয়ে কাজ করে, যার পরিসরে শ্রেণীগত, লিঙ্গগত ও উত্তরোপনিবেশী নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বে চিন্তার অনেক দ্বন্দ্বমূলক পথ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে নির্মাণবাদ, প্রতিষ্ঠানবাদ, মার্ক্সবাদ, নব্যগ্রামসিবাদ ইত্যাদি রয়েছে।
তত্ত্ব হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠ এর উৎস্যের অনুসন্ধান করতে গেলে পাওয়া যাবে ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত ই. এইচ. কারের দ্য টুয়েন্টি ইয়ারস ক্রাইসিস এবং ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হান্স মরগেনথাউ এর পলিটিক্স এমং ন্যাশনস ।[3] মনে করা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ার অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠ শুরু হয়।[4] আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠের শুরুর দিকের আন্তঃযুদ্ধ বছরগুলোতে সামষ্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য ব্যবস্থার প্রতিস্থাপনের মনোনিবেশ করা হয়। এই চিন্তাবিদদেরকে পরবর্তীকালে "ভাববাদী" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[5] এই চিন্তাধারার নেতৃস্থানীয় সমালোচনা এসেছিল কার এর "বাস্তববাদী" বিশ্লেষণ থেকে।
যাইহোক, ২০০৫ সালে ডেভিড লং ও ব্রায়ান স্মিদ এর একটি সাম্প্রতিক গবেষণা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উদ্ভব সম্পর্কে একটি নতুন ধারণা দেয়। এই সংশোধনবাদীগণ দাবি করেন, এই পাঠের উদ্ভব হয়েছিল ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকের সাম্রাজ্যবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের ধারণাগুলোর মধ্য দিয়ে। সংশোধনবাদীগণ দাবি করেন, ১৯১৮ সালের পূর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠ উপনিবেশী প্রশাসন, জাতি বিজ্ঞান ও জাতি বিকাশের আকারেই বিদ্যমান ছিল।[6]
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বসমূহকে শ্রেণীকরণ করতে গেলে ব্যাখ্যামূলক ও গঠনমূলক উপায়সমূহের মধ্যে একটি পরিষ্কার পার্থক্য পাওয়া যায়। ব্যাখ্যামূলক তত্ত্বগুলো বলে, তত্ত্বের সাহায্যে জগৎকে ব্যাখ্যা করা যায়, জগৎ তত্ত্বের বাইরে অবস্থান করে। গঠনমূলক তত্ত্বগুলো বলে, তত্ত্বগুলো জগৎকে গঠন বা নির্মাণ করতে সাহায্য করে।[7]