ইঙ্গ-জাঞ্জিবার যুদ্ধ
আফ্রিকা দখলের লড়াইয়ে জাঞ্জিবার সালতানাতের সাথে যুদ্ধ / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইঙ্গ-জাঞ্জিবার যুদ্ধ বা অ্যাংলো-জাঞ্জিবার যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল যুক্তরাজ্য ও জাঞ্জিবার সালতানাতে মধ্যে ২৭ আগস্ট, ১৮৯৬ সালে। যুদ্ধটি মাত্র ৩৮ মিনিট (কেউ কেউ ৪০ মিনিট অথবা ৪৫ মিনিটও বলে থাকেন) স্থায়ী হয়েছিল[3] এবং এই যুদ্ধকে ইতিহাসের সবচেয়ে কম সময়ের যুদ্ধ বলে আক্ষায়িত করা হয়।[4][5] জাঞ্জিবার সালতানাতের সুলতান হামিদ বিন তোয়াইনি ২৫ আগস্ট, ১৮৯৬ সালে মৃত্যুবরণ করলে সিংহাসনে বসেন খালিদ বিন বারঘাশ। কিন্তু ব্রিটিশরা সুলতান হিসেবে হামাদ বিন-মুহাম্মদকে বসাতে চেয়েছিল। ১৮৮৬ সালের এক চুক্তির আওতায় আশ্রিত রাজ্যের সুলতান হিসাবে হিংহাসনে বসতে হলে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অনুমতি নিতে হত। ১৮৯০ সালের ১৪ জুন জাঞ্জিবারের উপর একটি ব্রিটিশ প্রটেক্টরেট প্রবর্তনের চুক্তিতে সালতানাতে অন্তর্ভুক্তির জন্য একজন প্রার্থীর ব্রিটিশ কনসাল-এর অনুমতি নেওয়া উচিত, এবং খালিদ এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেননি।[6] কিন্তু বারঘাস ব্রিটিশদের এই চুক্তি অমান্য করায় ব্রিটিশরা তাকে ও তার সৈনিকদের রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করার সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু খালিদ ব্রিটিশদের কথা না শুনে প্রাসাদের চারপাশে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে তিনি প্রাসাদেই অবস্থান করেন। এখান থেকেই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।
ইঙ্গ-জাঞ্জিবার যুদ্ধ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: আফ্রিকা দখলের লড়াই | |||||||||
বোমা বর্ষণের পর বিধ্বস্ত রাজপ্রাসাদ | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য | জাঞ্জিবার সালতানাত | ||||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
হ্যারি রউসন লয়েড ম্যাথিউস |
খালিদ বিন বারঘাশ সালেহ্ | ||||||||
শক্তি | |||||||||
স্থলপথ: ১,০৫০ সমুদ্র: ৩টি ক্রুজিয়ার ২টি গানবোট |
স্থলপথ: ২,৮০০ ৪টি আর্টিলারি ১টি শ্যুর ব্যাটারি সমুদ্র: ১টি রাজকীয় তরী ২টি নৌকা | ||||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||||
একজন আহত[1] |
৫০০ আহত অথবা নিহত[2] একটি রাজকীয় প্রমদতরী ডুবে যায় দুটি নৌকা ডুবে যায় একটি শ্যুার ব্যাটারি ডুবে যায় |
ব্রিটিশদের বেধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হয় পূর্ব আফ্রিকা সময় (ইএটি) অনুসারে ২৭ আগস্ট ৯.০০ টায়। অপরদিকে ব্রিটিশরা হার্বার এলাকায় তিনটি ক্রুজিয়ার, দুটি গানবোট, ১৫০ জন মেরিন সেনা ও নাবিক, এবং ৯০০ জন জাঞ্জিবার বাসীকে একত্র করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। যেখানে ব্রিটিশ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল হ্যারি রাউসন এবং জাঞ্জিবার সেনাবাহিনী থেকে জাঞ্জিবারদের নেতৃত্বে ছিলেন বিগ্রেডিয়ার-জেনারেল লয়েড ম্যাথিউস (যিনি জাঞ্জিবারের প্রথম মন্ত্রী ছিলেন)।
অপরদিকে সুলতানের পক্ষে ২,৮০০ জাঞ্জিবার যুদ্ধা (যারা অধিকাংশই ছিলেন সাধারণ জনগণ) প্রাসাদ রক্ষায় যোগ দিয়েছিল। এদের নেতৃত্বে ছিল সুলতান খালেদের বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যরা। এছাড়াও সুলতানের কয়েকশ দাস, দাসীও যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সুলতান বাহিনী কিছু আর্টিলারি কামান ও কিছু ম্যাশিনগান নিয়ে প্রাসাদের সামনে অবস্থান নিয়েছিল। ব্রিটিশ বাহিনী ৯.০২ মিনিটে প্রাসাদ লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ শুরু করে ও কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রাসাদে আগুন ধরে যায়। এদিকে ব্রিটিশদের আর একটি ছোট দল সুলতান বাহিনীর একটি ইয়ট ও দুটি যুদ্ধের ছোট নৌকা ডুবিয়ে দেয়। ব্রিটিশ বাহিনী যখন প্রাসাদের দিকে এগোচ্ছিল তখন সুলতান বাহিনী বিচ্ছিন্ন ভাবে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করলেও শেষ পর্যন্ত তারা ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে টিকতে পারেনি। ৯.৪০ মিনিটে ব্রিটিশরা প্রাসাদে ঢুকে পতাকা নামিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
যুদ্ধে সুলতান খালিদের ৫০০ লোক আহত (অথবা, নিহত) হয় অপরদিকে ব্রিটিশদের মাত্র একজন নাবিক আহত হয়। ব্রিটিশরা যুদ্ধের প্রায় পরপরই সুলতান হামাদকে ক্ষমতায় বসায়। এরপর থেকে জাঞ্জিবার এক নতুন যুগে প্রবেশ করে যেখানে ব্রিটিশদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল।