প্যারিস চুক্তি
From Wikipedia, the free encyclopedia
প্যারিস চুক্তি (ফরাসি: Accord de Paris) জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি। এটি প্যারিস অ্যাকর্ড্স্ বা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নামেও পরিচিত। ২০২১ সালে গৃহীত এই চুক্তিটির মূল লক্ষ্য হলো পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্প-যুগের পূর্বের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা, যদি সম্ভব হয় তাহলে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হবে (জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ), জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় দেশগুলোকে সাহায্য করা (অভিযোজন) এবং উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অর্থায়ন সহায়তা করবে (অর্থায়ন)। ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে ১৯৬টি দেশ কর্তৃক প্যারিস চুক্তির আলোচনা করা হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত, জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কনভেনশনের (UNFCCC) ১৯৫টি সদস্য দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যে তিনটি UNFCCC সদস্য রাষ্ট্র চুক্তিটি অনুমোদন করেনি, তাদের মধ্যে একমাত্র প্রধান কার্বন নির্গমকারী দেশ হলো ইরান। যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও, ২০২১ সালে পুনরায় যোগদান করে।
খসড়া | ৩০ নভেম্বর – ১২ ডিসেম্বর ২০১৫, ল্য বুরজে, ফ্রান্স |
---|---|
স্বাক্ষর | ২২ এপ্রিল ২০১৬; ৮ বছর আগে (22 April 2016) |
স্থান | প্যারিস, ফ্রান্স |
কার্যকর | ৪ নভেম্বর ২০১৬; ৭ বছর আগে (4 November 2016)[1][2] |
শর্ত | জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তির (UNFCCC) ৫৫টি পক্ষ অনুমোদন এবং যোগদান করেছে, যা বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মোট পরিমাণের ৫৫% এর জন্য দায়ী। |
স্বাক্ষরকারী | ১৯৫[1] |
অংশগ্রহণকারী | ১৯৫[1] (তালিকা) |
আমানতকারী | জাতিসংঘের মহাসচিব |
ভাষাসমূহ |
|
উইকিসংকলনে প্যারিস চুক্তি |
প্যারিস চুক্তির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্প-পূর্ববর্তী স্তরের তুলনায় ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের (৩.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট) অনেক নিচে রাখা এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস (২.৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট) এ সীমাবদ্ধ করা। এটা স্বীকৃত যে, এটি করতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণভাবে কমানো যাবে। নিঃসরণ যত দ্রুত সম্ভব কমানো হবে এবং ২১ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ শূন্যে নিয়ে আসতে হবে।[3] বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখতে ২০৩০ সালের মধ্যে নিঃসরণ প্রায় ৫০% কমাতে হবে। এটি প্রতিটি দেশের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের (এনডিসি) সম্মিলিত ফল।[4]
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য হলো স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে মানিয়ে চলতে সহায়তা করা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথেষ্ট পরিমাণ অর্থায়ন সংগ্রহ করা। চুক্তির আওতায় প্রতিটি দেশ নির্ধারণ করবে, পরিকল্পনা করবে, এবং নিয়মিতভাবে তাদের অবদানের বিষয়ে রিপোর্ট করবে। কোনো বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নেই দেশগুলোকে নির্দিষ্ট নিঃসরণ লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য বাধ্য করার, তবে প্রতিটি লক্ষ্যই পূর্বের লক্ষ্যের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। ১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রোটোকলের বিপরীতে, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট নেই, তাই উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।
প্যারিস চুক্তি ২০২৬ সালের ২২ এপ্রিল (ধরিত্রী দিবস) জাতিসংঘের নিউইয়র্কস্থ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। চুক্তিটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনুমোদন করার পর, বিশ্বের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের যথেষ্ট পরিমাণের জন্য দায়ী দেশগুলো চুক্তিটি অনুমোদন করে। ফলে, চুক্তিটি ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর কার্যকর হয়।
প্যারিস চুক্তি বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা পেয়েছে, তবে কিছু পরিবেশবিদ এবং বিশ্লেষক এটিকে অপর্যাপ্তভাবে বাধ্যতামূলক বলে সমালোচনা করেছেন। চুক্তির কার্যকারিতা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বর্তমান অঙ্গীকারগুলো নির্ধারিত তাপমাত্রা লক্ষ্য অর্জনে অপর্যাপ্ত। কিছু দেশের অঙ্গীকারগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী নয় বা পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত নেই। চুক্তিটি দেশগুলোকে তাদের অঙ্গীকারগুলো পূরণ করতে বাধ্য করার জন্য কোনো শক্তিশালী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখে না।[5][6]