ব্যাপন
রাসায়নিক প্রক্রিয়া / From Wikipedia, the free encyclopedia
ব্যাপন হচ্ছে বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্তভাবে অধিক ঘনত্বের অঞ্চল থেকে কম ঘনত্বের অঞ্চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া। এছাড়াও 'স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় তাপ ও চাপে কোনো বস্তুর কঠিন,তরল কিংবা বায়বীয় মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে ব্যাপন (Diffusion) বলে। যেমন - ঘরের এক কোণে সেন্টের বোতল খোলা মুখে রাখলে তার থেকে সেন্টের সুগন্ধ পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে, এটি হলো গ্যাসীয় পদার্থের ব্যাপন। আবার তরল পানিতে কয়েক ফোটা তরল নীল বা তুঁতের দ্রবণ মেশানো হলে তা কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরো পানিকে নীল বর্ণে পরিণত করে, এটিও ব্যাপনের উদাহরণ তবে তরল পদার্থের ৷ আর চিনির দ্রবণ হলো কঠিন পদার্থের ব্যাপন। (যেহেতু চিনি কঠিন পদার্থ)
সকল পদার্থই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুর সম্মিলনে গঠিত। এইসব অণুসমূহ সর্বদা গতিশীল অবস্থায় বিরাজমান। তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের চলন অত্যন্ত দ্রুত এবং ক্রমান্বয়ে অণুসমূহ বেশি ঘনত্বের স্থান হতে কম ঘনত্বের স্থানের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অণুগুলোর চলন ততক্ষণ পর্যন্ত শেষ হয় না যতক্ষণ না উভয় পদার্থের অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হয়। অণুগুলোর ঘনত্ব সমান হওয়া মাত্রই ব্যাপন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কোন দুইটি স্থানে তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও অণুর ঘনত্ব সমান থাকলে সেখানে ব্যাপন ঘটবে না কারণ সেখানে গতিশক্তির ভিন্নতা থাকবে না। পক্ষান্তরে, যদি তাপ ও চাপগত পার্থক্য নাও থাকে তবুও শুধুমাত্র ঘনত্বের ভিন্নতার ভিত্তিতে ব্যাপন হবে কারণ গতিশক্তির ভিন্নতা থাকবে। আর কোনো বস্তুর অধিক ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের স্থানের দিকে ছড়িয়ে পড়ার প্রচ্ছন্ন ক্ষমতার হারকে ব্যাপনের হার বা ব্যাপন হার (The rate of Diffusion) বলে ৷
১. বস্তুর ভর ও তাপমাত্রা : ব্যাপনের হার বস্তুর ভরের উপর নির্ভরশীল । ভর যত বেশি হবে বস্তুুর ব্যাপনের হার তত কম হবে। অর্থাৎ, ব্যাপন হার বস্তুর ভরের (মোলার ভর) ব্যস্তানুপাতিক। অন্যদিকে তাপমাত্রা বেশি থাকলে ব্যাপনের হার বেড়ে যায়, কারণ ব্যাপনে অংশগ্রহণকারী অণুগুলোর প্রবাহ ক্ষমতা বা গতিশক্তি বেড়ে যায়।
২. পদার্থের অণুর ঘনত্ব: যে পদার্থের ব্যাপন ঘটবে সে পদার্থের অণুর ঘনত্ব বেশি থাকলে ব্যাপন হার বেশি হবে, অণুর ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার কম হবে।
৩. মাধ্যমের ঘনত্ব: যে মাধ্যমে ব্যাপন ঘটবে
সে মাধ্যমের ঘনত্ব বেশি হলে ব্যাপন হার কম
হবে; মাধ্যমের ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার বেশি হবে।
৪. বায়ুমণ্ডলের চাপ: বায়ুমণ্ডলের চাপ বাড়লে ব্যাপন হার কমবে, বায়ুমণ্ডলের চাপ কম হলে ব্যাপন হার বাড়বে।
৫. ঘনত্বের তারতম্য: ঘনত্বের তারতম্য যত বেশি হয় তত তাড়াতাড়ি পদার্থের কণাগুলো ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত একই সময়ে এবং একই স্থানে পরিবেশের তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলের চাপ সমান থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাপন পদার্থের
ঘনত্ব এবং মাধ্যমের ঘনত্বই ব্যাপন
নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবক হয়ে দাঁড়ায়। মাধ্যম ও ব্যাপন পদার্থ (যেমন-বেলুন ভর্তি বাতাস এবং চারপাশের বাতাস) যদি একই হয় তাহলে ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাপন ঘটবে যতক্ষণ পর্যন্ত
দুটোর ঘনত্ব সমান না হয়।
(diffusion)-ব্যাপন শব্দটি লাতিন শব্দ (diffundere) থেকে এসেছে, যার অর্থ "ছড়িয়ে পড়া"।
এটি কণার এলোমেলো চলনের উপর নির্ভর করে এবং বাল্ক মোশন এর সরাসরি প্রভাব ছাড়াই মিশ্রণ বা ওজন পরিবাহিত হয় । বাল্ক মোশন বা বাল্ক ফ্লো এর বৈশিষ্ট্য হলো উভয় দিকে পরিবহন ঘটা । এই সংমিশ্রণ বর্ণনা করার জন্য "পরিবাহ" শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
যদি কোনো প্রসারণ প্রক্রিয়াকে ফিকের মতবাদ দ্বারা বর্ণনা করা যায় তবে এটিকে একটি সাধারণ ব্যাপন (বা ফিকিয়ান ডিফিউশন) বলা হয়; অন্যথায়, এটিকে একটি ব্যতিক্রমী ব্যাপন (বা নন-ফিকিয়ান ডিফিউশন) বলা হয়।
ব্যাপনের মাত্রা সম্পর্কে কথা বলার সময় ২টি ভিন্ন স্কেল, দুটি পৃথক পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়:
১. ইমালসিভ পয়েন্টে ব্রাউনিয়ান গতি (উদাহরণস্বরূপ, সুগন্ধির একক স্প্রে) - যা মুলবিন্দু থেকে দূরত্বের বর্গমূল। ফিকিয়ান ব্যাপন = । ফিকিয়ান ব্যাপনে হলো ব্রাউনিয়ান গতির মাত্রা;
২. এক মাত্রার নির্দিষ্ট ঘনত্বের জন্য ব্যাপনের দৈর্ঘ্য। ফিকিয়ান বিস্তারে, এটি হলো: