মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক / From Wikipedia, the free encyclopedia
সভ্যতার শৈশবকালে, মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের অনেক পুরনো সংস্কৃতি ও সভ্যতা দেখেছে। এই ইতিহাস শুরু হয় মানব উপনিবেশের শুরুর দিক থেকে, এভাবে চলতে চলতে বেশ কিছু প্রাক ও পরবর্তী ইসলামিক সাম্রাজ্য হয়ে আজকের আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের মধ্য প্রাচ্যে পৌঁছেছে।
৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্বে প্রথম ফারাও অধীনে উচ্চ ও নিম্ন মিশরের রাজনৈতিক একীকরণ সঙ্গে মিশরীয় সভ্যতা একসঙ্গে বেড়ে ওঠে।[1] প্রায় পুরো মধ্য প্রাচ্যকে শাসন করতে আসা বেশ কিছু শক্তিশালী সাম্রাজ্য বিশেষ করে ১৩৬৫-১০৭৬ খ্রিষ্টপূর্বের অ্যাসিরিয়ান সাম্রাজ্য এবং ৯১১-৬০৫ খ্রিষ্টপূর্বের নব্য- অ্যাসিরিয়ান সাম্রাজ্য এর জন্য মেসোপোটেমিয়া ছিল বিচরণস্থান। খ্রিষ্টপূর্ব ৭ শতকের শুরুর দিকে এই এলাকা পারসিয়ান সাম্রাজ্যের ইরানিয়ান মিডিরা এবং পরবর্তি ইরানের রাজ্য সাম্রাজ্যের অধীনে থাকে। খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতকে বিস্তৃত রোমান সাম্রাজ্য পুরো পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দখল করে যার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অনেকাংশই ছিল।বলকান থেকে ইউফ্রেটিস সাম্রাজ্য পর্যন্ত শাসন করেছিল এই পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য যা এখন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। এরা ক্রমবর্ধমানভাবে পরিচিতি পেয়েছিল এবং খ্রিষ্টধর্মের প্রতি অন্ধবিশ্বাসী ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে অনেক জায়গাতে তাদের খ্রিষ্টধর্ম মতবাদ প্রতিষ্ঠার হুকুম এবং বিশ্বাসীদের মধ্যে ধর্মীয় ফাটল ধরায়।৩য় থেকে ৭ম খ্রিষ্টাব্দে পুরো মধ্য প্রাচ্য শাসন করেছে বাইজেন্টাইন ও পারস্যের সাসনীয়রা। ৭ম শতাব্দী থেকে মধ্যপ্রাচ্য এ ইসলামের নতুন শক্তি জেগে উঠে,। আরবদের শাসন হঠাৎ করেই ১১ শতকের মাঝামাঝি এসে সেলজুক রাজবংশের তুর্কিদের আগমনের সঙ্গে শেষ হয়। ১৩ শতকের শুরুর দিকে নতুন আক্রমণকারীর দল, মঙ্গল সাম্রাজ্যের সৈন্য দল মূলত তুর্কীয়রা এ অঞ্চলে আসে। ১৫ শতকের শুরুর দিকে পশ্চিম আনাতোলিয়ায় নতুন শক্তি জেগে উঠে,উসমানীয় সাম্রাজ্য ,ভাষাগত ভাবে তুর্কীয় এবং ধর্মীয় ভাবে মুসলিম, যারা ১৪৫৩ তে কনস্টান্টিনোপল খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন রাজধানী দখল করে এবং নিজেদের সুলতান বানায়।
১৬ শতকের শুরুর দিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল অংশ উসমানীয় ও ইরানিয়ান সাফাভিদের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে পরিনত হয়। ১৭০০ তে উসমানীয়রা হাঙ্গেরি থেকে বিতারিত হয় এবং পশ্চিমের পক্ষে সীমান্তে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতভাবে অপসারিত হয়েছিল। ব্রিটিশরাও পারস্য উপসাগরে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং ফরাসীরা তাদের প্রভাব লেবানন এবং সিরিয়াতেও বাড়িয়েছিল। ১৯১২ তে ইতালিয়ানরা উসমানীয় ভুখন্ডের আনাতোলিয়ার উপকূলের কিছু দূরে লিবিয়া ও ডোডেকানিস দ্বীপ দখল করে। ১৯ শতকের শেষ ও ২০ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপিয়ান শক্তির সাথে তাল মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের শাসকরা তাদের রাজ্যকে আধুনিক করতে চেষ্টা করেছিলেন। ১৯০৮ এ পারস্যে এবং পরে সৌদি আরব,লিবিয়া আলজেরিয়াসহ অন্যান্য পারস্য উপসাগরের রাজ্যে তেল আবিষ্কারের পর মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে দাড়ায়। পশ্চিমের তেলের উপর নির্ভরতা এবং ব্রিটিশদের প্রভাবের পতনের জন্য আমেরিকার এই অঞ্চলের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
১৯২০,১৯৩০,১৯৪০ এ সিরিয়া ও মিশর স্বাধীনতার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সময় ও পরে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ,ফরাসী ও সোভিয়েতরা বিদায় নিয়েছিল।১৯৪৭ এ জাতিসংঘের ফিলিস্তিন ভাগের পরিকল্পনা আরব ও ইহুদিদের মধ্যে সংগ্রাম চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। পরে স্নায়ুযুদ্ধের দুশ্চিন্তার মধ্যে,উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার আরবি ভাষী দেশগুলো একাত্মতা উত্থান হয়। ইউরোপিয়ান শক্তির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ দূর,ইসরাইলের প্রতিষ্ঠা এবং তৈল শিল্পে গুরুত্ব আধুনিক মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশগুলোতে, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি , অস্ত্র ও প্রতিপত্তি প্রকল্পে বাড়তি খরচ, এবং তেল রাজস্বের উপর অধিক নির্ভরতার জন্য বাজার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। অঞ্চলের সফল অর্থনীতি ছিল কম জনসংখ্যার তেল সম্পদযুক্ত দেশ গুলোতে,যেমন কাতার,বাহরাইন, কুয়েত, এবং আরব আমিরাত।
১৯৭৯ এ ইরানের বিপ্লব(ওরফে ইসলামী বিপ্লব) এবং ১৯৮০ - এর দশকে অন্যান্য মুসলিম-অধ্যুষিত দেশে অনুরূপ পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চল ভাবাদর্শে ইসলামিক।১৯৯১ এ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্নায়ুযুদ্ধ থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই কেন্দ্রিভুত হয় । ২০১০ এর শুরুর দিকে বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের এবং মাগরেব দেশের মধ্যে আরব বসন্ত নামে বিপ্লবের ধারা বয়ে গেছে । ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ তে পশ্চিম ইরাকের সংঘর্ষ আইএসআইএল এর উত্থানের প্রাথমিক ধাপ ছিল।
একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, নিকট প্রাচ্য শব্দটি মধ্যপ্রাচ্যের বদলে ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষত যখন প্রাচীন কাল নিয়ে আলোচনা হবে,এর সীমিত অর্থ থাকতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে আরামাইক-ভাষী সেমিটিক এলাকা এবং অ্যানাটোলিয়ান ভূখণ্ড সংলগ্ন দুটি মানচিত্রে নিচের দেয়া হল।