সলোমনের মন্দির
৯৫৭ খ্রিস্টপূর্ব সালে জেরুসালেমে নির্মিত ইহুদিদের পবিত্র মন্দির / From Wikipedia, the free encyclopedia
শলোমনের মন্দির, যা প্রথম মন্দির নামেও পরিচিত (হিব্রু ভাষায়: בֵּית-הַמִּקְדָּשׁ הָרִאשׁוֹן; 'গর্ভগৃহের প্রথম ঘর'), হল হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী জেরুসালেমের প্রথম মন্দির। এটি শলোমনের শাসনামলে ইস্রায়েল যুক্তরাজ্যে নির্মিত হয়েছিল। এটি সম্পূর্ণরূপে নির্মিত হয়েছিল আনু. ৯৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। এটি ৫৮৭/৫৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় ব্যাবিলনীয় রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার ধ্বংস করে। তার আগ পর্যন্ত এটি প্রায় চার শতাব্দী ধরে টিকে ছিলো,[1] দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার পরবর্তীকালে যিহূদা রাজ্যের পতন ও যিহূদাকে ব্যাবিলন সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর তিনি ইহুদিদেরকে ব্যাবিলনে নির্বাসিত করেন। ব্যাবিলনীয় প্রদেশ হিসেবে মন্দিরের ধ্বংস ও ব্যাবিলনীয় নির্বাসনকে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা হিসাবে দেখা হয়েছিল। ফলে এটি ইহুদি ধর্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। ঘটনাটি ইস্রায়েলীয়দের ইহুদি ধর্মের বহু-ঈশ্বরবাদী বা একতাবাদী বিশ্বাস থেকে বিকশিত একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোতে আনতে শুরু করেছিল।[2]
শলোমনের মন্দির | |
---|---|
בֵּית־הַמִּקְדָּשׁ | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ |
ঈশ্বর | ইয়াহওয়েহ্ |
অবস্থান | |
অবস্থান | মোরিয় পর্বত, জেরুসালেম |
দেশ | ইস্রায়েল ও যিহূদা যুক্তরাজ্য (নির্মাণের সময়) |
স্থানাঙ্ক | ৩১.৭৭৮০১৩° উত্তর ৩৫.২৩৫৩৬৭° পূর্ব / 31.778013; 35.235367 |
স্থাপত্য | |
প্রতিষ্ঠাতা | শলোমন |
সম্পূর্ণ হয় | আনু. ৯৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ |
ধ্বংস | ৫৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ |
ইহুদি ধর্মের হিব্রু বাইবেল (বা খ্রিস্টধর্মের পুরনো নিয়ম) শলোমনের পিতা দায়ূদের বারোটি ইস্রায়েলীয় বংশকে একত্রিত করা, জেরুসালেম জয় ও ইস্রায়েলীয়দের কেন্দ্রীয় শিল্পকর্ম চুক্তিসিন্দুক শহরে নিয়ে আসাকে বর্ণনা করে।[3] পরবর্তীকালে দায়ূদ ভবিষ্যতের মন্দিরের স্থান হিসাবে জেরুসালেমের মোরিয়া পর্বতকে বেছে নেন, মন্দিরটিতে তিনি সিন্দুকটি রাখার পরিকল্পনা করেন;[2] তবে ঈশ্বর তাকে এটি নির্মাণ করতে নিষেধ করেছিলেন কারণ তিনি "অনেক রক্তপাত" করেছিলেন।[4] প্রথম মন্দিরটি তার পুত্র শলোমনের অধীনে নির্মিত হয়েছিল। শলোমন প্রাচীন ইস্রায়েলে জনসাধারণের কাছে একজন উচ্চাভিলাষী নির্মাতা হয়ে উঠেছিলেন।[5] তিনি সিন্দুকটিকে পবিত্রদের মাঝে পবিত্রতম স্থানে স্থাপন করেছিলেন। এটি ছিলো একটি জানালাবিহীন অভ্যন্তরীণ কক্ষ এবং তথা মন্দিরের সবচেয়ে পবিত্র এলাকায় — যেখানে ঈশ্বরের উপস্থিতি বিশ্রাম নিতো;[6] পবিত্রদের মাঝে পবিত্রতম স্থানে প্রবেশের উপর ব্যাপকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এখানে শুধুমাত্র ইস্রায়েলের মহাযাজক বছরে একবার ইয়োম কিপ্পুরে অভয়ারণ্যে বলির মেষের রক্ত নিয়ে প্রবেশ করতেন ও ধূপ জ্বালাতেন।[6]
বাইবেল অনুযায়ী মন্দিরটি কেবল উপাসনার জন্য একটি ধর্মীয় ভবন ছিলো না, এটি ইস্রায়েলীয়দের সমাবেশের স্থান হিসাবেও ব্যবহৃত হতো।[2] ব্যাবিলনের যিহূদা বিজয়ের পর ইহুদিরা নির্বাসিত হয়। তারা শেষ পর্যন্ত ব্যাবিলনের পতনের পর হাখমানেশি সাম্রাজ্যের রাজা মহান কুরুশের একটি ঘোষণার মাধ্যমে ফিরে আসার অনুমতি পায়। পারস্যের প্রাদেশিক শাসনের অধীনে যিহূদায় ফিরে আসা ইহুদি জনগোষ্ঠী জেরুসালেমে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করে, যা দ্বিতীয় মন্দির নামে পরিচিত; পুনঃনির্মিত মন্দিরে আর সিন্দুক রাখা হয়নি, কারণ এটি উধাও হয়ে গিয়েছিল।[7]
বেশিরভাগ পণ্ডিতরা আজ একমত যে নেবুচাদনেজার দ্বিতীয় জেরুসালেম অবরোধের সময় হারাম আল-শরিফে একটি মন্দির বিদ্যমান ছিল। যাইহোক এর নির্মাণ তারিখ ও এর নির্মাতার পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।[8] রাজাবলিতে ইস্রায়েলীয় রাজা শলোমনের দ্বারা খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীতে তৈরি হওয়া একটি মন্দির নির্মাণের বিশদ বিবরণ রয়েছে, যা পূর্ববর্তী প্রজন্মের পণ্ডিতরা সঠিক হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮০ এর দশক থেকে বাইবেলের পাঠ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নথির প্রতি সন্দেহজনক দৃষ্টিভঙ্গি কিছু পণ্ডিতদের এই সন্দেহের দিকে পরিচালিত করেছিল যে খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দীতে জেরুসালেমে আদৌ কোনো মন্দির নির্মিত হয়েছিল কিনা।[9] শলোমনের মন্দিরের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি ও বাইবেল-বহির্ভূত বিবরণে এর উল্লেখ নেই।[8][10] তবে স্থানটির চরম রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে হারাম আল-শরিফে কোনো প্রকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করা হয়নি। কিছু পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লিখিত মৃৎশিল্পের একটি শিলালিপি অস্ট্রাকন ১৮ জেরুসালেম মন্দিরের উল্লেখ করে।[11] যদি তাই হয়, তবে এটি হবে মন্দিরের একমাত্র অনুমোদিত বাইবেল-বহির্ভূত প্রমাণ।
গত দশকে আধুনিক ইসরায়েলের দুটি প্রাচীন ইস্রায়েলীয় স্থান থেকে নতুন করে অনুসন্ধানের মাধ্যমে মন্দিরের ব্যাপারে ধারণার চিত্রটি পরিবর্তিত হয়েছে: খিরবেত কিয়াফা থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীর একটি মন্দিরের মডেল ও পশ্চিম জেরুসালেমের উপকণ্ঠে মোতজাতে পাওয়া একটি প্রকৃত মন্দির যেটি খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দী সময়ের। উভয় প্রমাণই শলোমনের মন্দিরের সাথে সাদৃশ্য বহন করে যেমনটি বাইবেলে বর্ণিত হয়েছে।[12][9]