হিন্দু ধর্মগ্রন্থ
From Wikipedia, the free encyclopedia
হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পাণ্ডুলিপি ও ঐতিহাসিক সাহিত্যের সংকলনকে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বলা হয়। কয়েকটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ একাধিক সম্প্রদায়ে স্বীকৃত। এগুলিকেই বৃহত্তর অর্থে হিন্দুশাস্ত্র বলা হয়ে থাকে।[1][2] বেদ ও উপনিষদ্ হিন্দুশাস্ত্রের অন্তর্গত। হিন্দুধর্মের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে গবেষকরা ‘হিন্দুশাস্ত্রে’র সংজ্ঞা নির্ধারণের বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্থ বোধ করেন।[2][3] কেউ কেউ ভগবদ্গীতা ও আগম শাস্ত্রকে হিন্দুশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন।[2][3][4] অন্যদিকে ডোমিনিক গুডাল ভাগবত পুরাণ ও যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতিকেও হিন্দুশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[2]
হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির দুটি ঐতিহাসিক শ্রেণিবিন্যাস হল: ‘শ্রুতি’ (যা শোনা হয়েছে)[5] ও স্মৃতি (যা মনে রাখা হয়েছে)।[6] শ্রতিশাস্ত্রগুলি সর্বোচ্চ প্রামাণিক ধর্মগ্রন্থ। এগুলি সেই প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ যেগুলিকে ‘অপৌরুষেয়’ (স্বয়ং ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত) মনে করা হয়। এগুলিই হিন্দুধর্মের কেন্দ্রীয় ধর্মগ্রন্থ।[5] সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও মুখ্য উপনিষদ্ সহ সমগ্র বেদ শ্রুতিশাস্ত্রের অন্তর্গত।[7] শ্রুতিশাস্ত্রের বধ্যে উপনিষদ্ এককভাবে হিন্দুধর্মে বিশেষ প্রভাবশালী। এই অংশকে হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ মনে করা হয়। উপনিষদের কেন্দ্রীয় ভাবনাটি এখনও বিভিন্ন দার্শনিক শাখা ও ধর্মীয় প্রথার উপর বিশেষ প্রভাবশালী।[8][9]
নির্দিষ্ট লেখক কর্তৃক রচিত ধর্মগ্রন্থগুলি ‘স্মৃতি’ পর্যায়ভুক্ত।[7] শ্রুতিশাস্ত্রের তুলনায় স্মৃতিশাস্ত্রের গুরুত্ব কম।[6] স্মৃতিশাস্ত্র বৈচিত্র্যপূর্ণ এক বিশাল শাস্ত্র-সংকলন। বেদাঙ্গ, হিন্দু মহাকাব্য, ধর্মসূত্র, হিন্দু দর্শন, পুরাণ, কাব্য, ভাষ্য এবং রাজনীতি, নৈতিকতা, সংস্কৃতি, শিল্প ও সমাজ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ‘নিবন্ধ’ এই ধারার অন্তর্গত।[10][11]
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলি সংস্কৃত ভাষায় রচিত। অনেক ধর্মগ্রন্থ স্থানীয় ভারতীয় ভাষাতেও রচিত। আধুনিক কালে প্রাচীনতমন ধর্মগ্রন্থগুলি ভারতের বিভিন্ন ভাষা এবং পাশ্চাত্যের নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[2] খ্রিস্টের জন্মের আগে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলি মুখে মুখে রচিত হত ও মনে রাখা হত এবং মুখে মুখেই গুরুশিষ্য-পরম্পরায় এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রচলিত ছিল। এক সহস্রাব্দ পর এগুলি পাণ্ডুলিপি আকারে লিখিত হয়।[12][13] হিন্দুশাস্ত্র মুখে মুখে সংরক্ষণ ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রচলনের এই প্রথা আধুনিক যুগেও প্রচলিত আছে।[12][13]