হানাফী (মাযহাব)
সুন্নি ইসলামের একটি মাযহাব / From Wikipedia, the free encyclopedia
হানাফি বা আহনাফ বা হানাফি মাযহাব বা ফিকহে হানাফি, এই মাযহাবকে তাবেয়ী ইমাম আবু হানিফার (৮০হি. - ১৫০হি.) সাথে সম্পর্কিত করা হয়। ইহা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্যান্য মাযহাবের মধ্যে সর্বপ্রাচীন সংঘবদ্ধ মাযহাব।[1][2][3]
হানাফী মাযহাবকে অন্যতম প্রচলিত ধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এবং মুসলিম সম্প্রদায়ে সবচেয়ে বেশি গ্রহণকৃত মাযহাব এটি। একে বিচারকদের মাযহাবও বলা হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রসারিত মাযহাব এবং চার মাযহাব এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন। এই মাযহাবের গুরুত্ব এই যে, এটি শুধু ইমাম আবু হানিফার একক বক্তব্য নয়, বরং তাঁর বক্তব্যের চেয়েও সাহাবীদের বক্তব্য বেশি গ্রহন করে থাকে। হানাফী মাযহাবের চিন্তাধারাকে এমন একটি মতবাদ হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা ইসলামী আইনশাস্ত্র এর সমস্যাগুলি সম্পাদন এবং সেগুলিকে অধ্যায়গুলিতে বিন্যস্তকরণ করে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে। ইমাম আবু হানিফাই সর্বপ্রথম ইলমুশ শরিয়াকে শাস্ত্রবদ্ধ করেন এবং অধ্যায়ে অধ্যায়ে বিন্যস্ত করেন; তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইমাম মালিক বিন আনাস তার প্রসিদ্ধ আল-মুয়াত্তা কিতাব তারতিব করেন। আবু হানিফার পূর্বে এ কাজে কেউ ব্রত হন নি, কারণ সাহাবী ও তাবেয়ীনগণ শরিয়া বিজ্ঞানে শ্রেণীবদ্ধ অধ্যায় প্রতিষ্ঠা করে বা পুস্তক সম্পাদনা করে যান নি, বরং শরিয়তকে মুখস্থ করার শক্তির উপর নির্ভর করতেন। যখন আবু হানিফা দেখলেন ইসলামী সভ্যতায় জ্ঞানের দিগ্বিদিক প্রসারিত হচ্ছে, তখন তিনি পরবর্তী উত্তরসূরিরা ইসলামী শরিয়তকে বানোয়াট করে মন্দ লিপ্ত হবার ভয় থেকে এ শাস্ত্রকে তড়িৎ দাঁড় করান এবং শ্রেণীবদ্ধ অধ্যায় সংবলিত এক্ সংঘটিত পুস্তক তৈরিতে মনোনিবেশ করেন। তিনি প্রথমে তিনি শুরু করেন তাহারাত দিয়ে, তারপর নামাজ, তারপরে অন্যান্য ইবাদত, তারপরে লেনদেন, তারপর উত্তরাধিকার দিয়ে বই শেষ করেন, এই বিন্যাস পরবর্তী ফকীহগণ গ্রহণ করেন।[4][5]
আবহমান কাল ধরে হানাফি মতবাদের অনুসারী সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ইরাক, সিরিয়া, সুদান, মিশর, জর্দান, তুরস্ক, আজারবাইজান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তুর্কিস্তান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা।[6][7][8] বাকি অন্যান্য আরব ও অনারব দেশে প্রচুর হানাফি মাযহাবের অনুসারী রয়েছেন তবে তা অন্যান্য সকল মাযহাবের সংখ্যার বিবেচনায় কম।