আগুন
From Wikipedia, the free encyclopedia
আগুন দ্রুত প্রজ্জ্বলনশীল পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়াবিশেষ। এটি তাপোৎপাদী, দহন বিক্রিয়ায় পদার্থের দ্রুত জারণ প্রক্রিয়া। এতে উত্তাপ, আলো সহ বহুবিধ রাসায়নিক উৎপাদ সৃষ্টি হয়।[1][টীকা 1] আগুন গরম, কারণ আণবিক অক্সিজেন, O2, এর দুর্বল দ্বি-বন্ধন, দহন বিক্রিয়ার উৎপাদ কার্বন ডাই অক্সাইড ও [জল] দৃঢ় বন্ধনে রূপান্তরের সময় শক্তি উৎপাদন করে (প্রতি ৩২ গ্রাম O2 থেকে ৪১৮ kJ শক্তি); জ্বালানির বন্ধন শক্তি এখানে খুব সামান্যই ভূমিকা পালন করে।[2] দহন বিক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা জ্বলনাঙ্কে পৌছালে অগ্নিশিখা উৎপন্ন হয়। শিখা হলো আগুনের দৃশ্যমান অংশ। অগ্নিশিখা মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন নিয়ে গঠিত। যথেষ্ট উত্তপ্ত হলে, গ্যাস আয়নিত হয়ে প্লাজমা উৎপাদন করতে পারে।[3] প্রজ্জ্বলিত পদার্থের উপাদান এবং অপদ্রব্যের উপস্থিতির ভিত্তিতে শিখার রং এবং আগুনের তীব্রতা ভিন্ন হয়।
আগুনের একটি সাধারণ রূপ হলো অগ্নিদাহ, যা পোড়ানোর মাধ্যমে শারীরিক ক্ষতিও ঘটাতে পারে। আগুন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা সারা বিশ্বের পরিবেশ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। আগুনের ইতিবাচক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করা এবং বিভিন্ন বাস্তুতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখা। এর নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে জীবন এবং সম্পত্তির ঝুঁকি, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ এবং পানি দূষণ।[4] যদি আগুন প্রতিরক্ষামূলক গাছপালার ক্ষতিসাধন করে, তবে ভারী বৃষ্টিপাতের পানিতে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পেতে পারে।[5] এছাড়াও গাছপালা পুড়লে এতে অবস্থিত পটাশিয়াম এবং ফসফরাস ছাইয়ের মধ্যে থেকে পুনঃব্যবহারের জন্য দ্রুত মাটিতে মিশ্রিত হলেও নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে মুক্ত হয়ে যায়। আগুনের কারণে নাইট্রোজেনের এই ক্ষয় দীর্ঘমেয়াদীভাবে মাটির উর্বরতা হ্রাস করে। তবে এই উর্বরতা সম্ভবত পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে নাইট্রোজেন সংবদ্ধকরণ এর মাধ্যমে, যেমনটা বজ্রপাত ও নাইট্রোজেন সংবদ্ধকারী লিগিউম জাতীয় উদ্ভিদ যেমন মটরশুঁটি, শিম বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত আণবিক নাইট্রোজেনকে অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে দেখা যায়।
জমি সাফাই, রন্ধন, তাপ ও আলো উৎপাদন, সংকেত প্রদান, যন্ত্রের চালিকাশক্তি, ধাতু বিগলন, বর্জ্য পোড়ানো, অগ্নিসংস্কার এবং ধ্বংসের অস্ত্র বা মাধ্যম হিসেবে মানব জাতি আগুন ব্যবহার করেছে। আগুনের আবিষ্কার ও নিয়ন্ত্রণ, মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত।[6] প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগে হোমো ইরেক্টাস কর্তৃক আগুন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।[7][8]