আফগানিস্তানের ভূগোল
From Wikipedia, the free encyclopedia
আফগানিস্তান এশিয়া মহাদেশের কেন্দ্রে, ইরানীয় মালভূমির ওপর অবস্থিত একটি দেশ।[1][3] দেশটির আয়তন ৬৪৭,৫০০ বর্গকিলোমিটার। দেশটি স্থলবেষ্টিত ও পর্বতময়। হিন্দু কুশ পর্বতমালার অধিকাংশই এই দেশে অবস্থিত। দেশটিতে চারটি প্রধান নদী আছে: আমু দরিয়া, হারি রুদ, কাবুল নদী এবং হেলমন্দ নদী।
| ||
মহাদেশ | এশিয়া | |
অঞ্চল | দক্ষিণ এশিয়া [1][2][3] | |
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা | ৩৩°০০′ উত্তর ৬৫°০০′ পূর্ব | |
আয়তন - মোট - জল |
৪১তম ৬,৪৭,৫০০ কিমি২ (২,৫০,০০০ মা২) 0 km2 (landlocked) | |
তটরেখা | স্থল দ্বারা বেষ্ঠিত | |
সীমান্ত | পাকিস্তান ২,৪৩০ কিমি (১,৫১০ মা), তাজিকিস্তান ১,২০৬ কিমি (৭৪৯ মা), ইরান ৯৩৬ কিমি (৫৮২ মা), তুর্কমেনিস্তান ৭৪৪ কিমি (৪৬২ মা), উজবেকিস্তান ১৩৭ কিমি (৮৫ মা), চীন ৭৬ কিমি (৪৭ মা) | |
সর্বোচ্চ চূড়া | নুসাক, ৭,৪৯২ মি (২৪,৫৮০ ফু) | |
সর্বনিম্ন অঞ্চল | আমু দরিয়া, ২৫৮ মি (৮৪৬ ফু) | |
দীর্ঘতম নদী | হেলমন্দ নদী | |
বৃহত্তম জলবেষ্ঠিত এলাকা | কাজাকি দাম দালা দাম নাগলু দাম ব্যান্ড-ই-আমির কুর্গা | |
ব্যবহৃত স্থলভাগ - আবাদী জমি - স্থায়ী শস্য - অন্যান্য |
(২০০৫-এর হিসাব অনুযায়ী) ১২.১৩% ০.২১% ৮৭.৬৬% | |
সেচ ব্যবস্থা সংবলিত ভূমি | ২৭,২০০ কিমি২ (১০,৫০০ মা২) | |
আবহাওয়া: | শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক | |
প্রাকৃতিক সম্পদ | প্রাকৃতিক গ্যাস, জ্বালানী, কয়লা, তামা, ইউরেনিয়াম, সোনা, রূপা, ক্রোমাইট, টেলসি, ব্যারাইট, গণ্ধক, সীসা, দস্তা, লবণ, মূল্যবান ও অর্ধ-মূল্যবান পাথর[1][4][5][6][7] | |
প্রাকৃতিক দূর্যোগ | ভূমিকম্প, বন্যা, হিমবাহ | |
পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ | বিশুদ্ধ পানির সীমাবদ্ধতা, মাত্রাতিরিক্ত পশুচারণ, অরণ্যবিনাশ, মরুকরণ, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ |
আফগানিস্তানের উত্তর সীমানায় তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান; পূর্বে চীন এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীর; দক্ষিণে পাকিস্তান এবং পশ্চিমে ইরান।
দেশটির আয়তন ৬৫২,২২৫ বর্গ কিমি (২৫১,৮২৫ বর্গমাইল)। পূর্ব-পশ্চিমে এর সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১,২৪০ কিমি (৭৭০ মাইল); উত্তর-দক্ষিণে সর্বোচ্চ ১,০১৫ কিমি (৬৩০ মাইল)। উত্তর-পশ্চিম, পশ্চিম ও দক্ষিণের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি মূলত মরুভূমি ও পর্বতশ্রেণী। উত্তর-পূর্বে দেশটি ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে হিমবাহ-আবৃত পশ্চিম হিমালয়ের হিন্দুকুশ পর্বতের সাথে মিশে গেছে। আমু দরিয়া নদী ও এর উপনদী পাঞ্জ দেশটির উত্তর সীমান্ত নির্ধারণ করেছে।
আফগানিস্তানের অধিকাংশ অঞ্চল সুউচ্চ পর্বতময় এলাকা। দেশটির প্রায় অর্ধেক এলাকার উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ২,০০০ মিটার বা তার চেয়ে উঁচুতে অবস্থিত। ছোট ছোট হিমবাহ ও বছরব্যাপী তুষারক্ষেত্র প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়। উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ৭,৪৮৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট নওশাক আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এটি পাকিস্তানের তিরিচ মির পর্বতশৃঙ্গের একটি নিচু পার্শ্বশাখা। পর্বতটি আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বে হিন্দুকুশ পর্বতমালার অংশ, যেটি আবার পামির মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত। হিন্দুকুশ থেকে অন্যান্য নিচু পর্বতসারি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রধান শাখাটি দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রসারিত হয়ে পশ্চিমের ইরান সীমান্ত অবধি চলে গেছে। এই নিচু পর্বতমালাগুলির মধ্যে রয়েছে পারোপামিসুস পর্বতমালা, যা উত্তর আফগানিস্তান অতিক্রম করেছে, এবং সফেদ কোহ পর্বতমালা, যা পাকিস্তানের সাথে পূর্ব সীমান্ত তৈরি করেছে। সফেকদ কোহ-তেই রয়েছে বিখ্যাত খাইবার পাস, যা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে সংযুক্তকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ। অপেক্ষাকৃত নিম্নভূমিগুলি দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমে অবস্থিত। এদের মধ্যে রয়েছে উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের হেরাত-ফেরা নিম্নভূমি, দক্ষিণ-পশ্চিমের সিস্তান ও হেলমন্দ নদী অববাহিকা, এবং দক্ষিণের রিগেস্তান মরুভূমি।
নদী উপত্যকাগুলি ও আরও কিছু ভূগর্ভস্থ পানিবিশিষ্ট নিম্নভূমি ছাড়া অন্য কোথাও কৃষিকাজ হয় না বললেই চলে। মাত্র ১২ শতাংশ এলাকা পশু চারণযোগ্য। দেশটির মাত্র ১ শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল, এবং এগুলি মূলত পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানে অবস্থিত। যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকটের কারণে বনভূমি দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আফগানিস্তান এত পর্বতময় যে এগুলির মধ্যকার রাস্তাগুলি দেশটির বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহামতি আলেকজান্ডার কুশান পাসের ভেতর দিয়ে এসে দেশটি আক্রমণ করেন এবং খাইবার পাস দিয়ে বের হয়ে গিয়ে ভারত আক্রমণ করেন। এই একই পথ ধরে মোঘল সম্রাট বাবর ১৫শ শতকে এসে আফগানিস্তান ও ভারত দুই-ই করায়ত্ত করেন। অন্যদিকে সোভিয়েতরা সালাং পাস ও কেন্দ্রীয় হিন্দুকুশে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখল করে।