গর্ভধারণ
মায়ের শরীরে মনুষ্য সন্তান বেড়ে উঠার সময়কাল / From Wikipedia, the free encyclopedia
গর্ভধারণ (ইংরেজি: Pregnancy) হলো এমন একটি পর্যায় বা সময়সীমা যখন এক বা একাধিক ভ্রূণ মাতৃগর্ভ বা জরায়ুতে বিকাশ লাভ করে।[4][13] বহু গর্ভধারণ বলতে একাধিক বাচ্চার জন্মলাভ বুঝায় যেমন যমজ।[14] গর্ভধারণ সাধারণত রতিক্রিয়ার ফলে ঘটে, তবে সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি ব্যবহার করেও গর্ভধারণ ঘটানো সম্ভব।[6] একটি গর্ভধারণ জীবিত জন্ম, গর্ভস্রাব, কৃত্রিম গর্ভপাত অথবা মৃত জন্মের মাধ্যমে শেষ হতে পারে। সন্তান প্রসব সাধারণত সর্বশেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে হয়ে থাকে যাকে গর্ভকালীন বয়স (জেস্টেশনাল এইজ) বলা হয়,[4][5] যা পঞ্জিকা অনুযায়ী নয় মাসের একটু বেশি। নিষেক বয়স (ফার্টিলাইজেশন এইজ) অনুযায়ী গণনা করলে প্রায় ৩৮ সপ্তাহ হয়।[5][13] গর্ভধারণ হলো জরায়ুতে একটি রোপিত মানব ভ্রূণ বা প্রভ্রূণের উপস্থিতি; নিষেকের পরে সাধারণত গড়ে ৮-৯ দিন পরে ডিম্বরোপণ (ইমপ্লান্টেশন) হয়।[15] ইমপ্লান্টেশন বা রোপণের পরে প্রথম সাত সপ্তাহে (অর্থাৎ গর্ভকালীন বয়স দশ সপ্তাহ) গর্ভে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত সন্তানকে ভ্রূণ (এমব্রিও) বলে, এর পর থেকে জন্মাবধি ফিটাস বা প্রভ্রূণ বলে।[5] গর্ভধারণের প্রথমদিকের লক্ষণ ও চিহ্নসমূহ হলো মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্তনে ব্যথা, প্রাতঃকালীন অসুস্থতা (বমনেচ্ছা ও বমন), ক্ষুধা লাগা, ডিম্বরোপণ রক্তক্ষরণ ও ঘনঘন প্রস্রাব।[1] গর্ভধারণ পরীক্ষা করার মাধ্যমে গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।[7] গর্ভধারণ এড়ানোর জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি — বা, আরও সঠিকভাবে, গর্ভনিরোধ পদ্ধতি — ব্যবহার করা হয়। গর্ভধারণের পুরো সময়কে তিনটি ট্রাইমেস্টার বা ত্রিমাসে বিভক্ত করা হয় এবং প্রায় প্রতি তিন মাসে এক ট্রাইমেস্টার বা ত্রিমাস ধরা হয়। প্রথম ত্রিমাসে শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়। নিষিক্ত ডিম্বাণু তখন ফ্যালোপিয়ান নালি বা ডিম্বনালি বেয়ে নিচে নেমে এসে জরায়ুর অভ্যন্তরে রোপিত হয়, যেখানে এটি ভ্রূণ ও অমরা গঠন করতে শুরু করে। প্রথম ত্রিমাসে, গর্ভস্রাব বা গর্ভচ্যুতির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। দ্বিতীয় ত্রিমাসের মধ্যভাগে ফিটাস বা প্রভ্রূণের নড়াচড়া অনুভব করা যেতে পারে। ২৮ সপ্তাহে, ৯০%-এর বেশি বাচ্চা জরায়ুর বাইরে বেঁচে থাকতে পারে যদি অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যায়, যদিও এই সময়ে জন্মগ্রহণকারী বাচ্চার অনেক ধরনের জটিলতা দেখা যায়, যেমন হৃৎপিণ্ড ও শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদি বুদ্ধিবৃত্তিক ও বিকাশসংক্রান্ত অক্ষমতা। প্রসবপূর্ব সেবা প্রদান করা হলে গর্ভধারণ পরিণতি ভালো হয়।[9] প্রভ্রূণের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ জরুরি।[16] প্রসবপূর্ব সেবার মধ্যে আরও রয়েছে বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহার এড়িয়ে চলা (তামাক ও অ্যালকোহলসহ), নিয়মিত ব্যায়াম করা, রক্ত পরীক্ষা ও নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করা।[9] গর্ভধারণের জটিলতার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগসমূহ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, লৌহ-ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা ও তীব্র বমনেচ্ছা ও বমন (হাইপারেমেসিস গ্র্যাভিড্যারাম)।[3] আদর্শ সন্তানপ্রসবের ক্ষেত্রে গর্ভকাল বা টার্মের সময় নিজে থেকেই প্রসববেদনা শুরু হয়।[17] ৩৭ সপ্তাহের পূর্বে জন্মগ্রহণকারী বাচ্চাদেরকে প্রাক্-গর্ভকাল (প্রিটার্ম) বলে অভিহিত করা হয় এবং এদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার (যেমন সেরিব্রাল পল্জি বা মস্তিষ্ক পক্ষাঘাত) ঝুঁকি অনেক বেশি।[4] ৩৭ থেকে ৩৯ সপ্তাহের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদেরকে প্রারম্ভিক গর্ভকাল (আর্লি টার্ম) ও ৩৯ থেকে ৪১ সপ্তাহের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদেরকে পূর্ণ গর্ভকাল (ফুল টার্ম) নামে অভিহিত করা হয়।[4] ৪১ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে জন্মগ্রহণকারীদেরকে বিলম্বিত গর্ভকাল (লেইট টার্ম) ও ৪২ সপ্তাহের পরে গর্ভকালোত্তর (পোস্ট-টার্ম) বলা হয়।[4] চিকিৎসাগত প্রয়োজন ছাড়া ৩৯ সপ্তাহের আগে প্রসব প্রবর্তনা (লেবার ইনডাকশন) বা সিজারিয়ান সেকশন (জরায়ু ছেদন) পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবের জন্য সুপারিশ করা হয় না।[18]
গর্ভধারণ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | গর্ভাবস্থা, গর্ভাধান |
গর্ভধারণের তৃতীয় ত্রিমাসে উপনীত একজন নারী। | |
বিশেষত্ব | ধাত্রীবিদ্যা, প্রসূতিতন্ত্র |
লক্ষণ | মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্তনে ব্যথা, বমিভাব ও বমন, ক্ষুধা, ঘনঘন প্রস্রাব[1] |
জটিলতা | গর্ভস্রাব বা গর্ভচ্যুতি, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, লৌহ-ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা, তীব্র বমনেচ্ছা ও বমন[2][3] |
রোগের সূত্রপাত | নিষেক সংঘটিত হওয়ার সময় থেকে। |
স্থিতিকাল | ~ সর্বশেষ ঋতুকাল থেকে ৪০ সপ্তাহ (গর্ভধারণের সময় থেকে ৩৮ সপ্তাহ)[4][5] |
কারণ | যৌনসঙ্গম, সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি[6] |
ঝুঁকির কারণ | প্রি-এক্লাম্পসিয়া (প্রাক্-গর্ভাক্ষেপ), এক্লাম্পসিয়া (গর্ভাক্ষেপ) |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | গর্ভধারণ পরীক্ষা[7] |
প্রতিরোধ | জন্ম নিয়ন্ত্রণ (জরুরি গর্ভনিরোধসহ)[8] |
চিকিৎসা | প্রসবপূর্ব সেবা,[9] গর্ভপাত[8] |
ঔষধ | ফলিক অ্যাসিড, লৌহ সম্পূরণ[9][10] |
সংঘটনের হার | ২১ কোটি ৩০ লাখ (২০১২)[11] |
মৃতের সংখ্যা | ২,৩০,৬০০ (২০১৬)[12] |