চলচ্চিত্র সম্পাদনা
From Wikipedia, the free encyclopedia
চলচ্চিত্র সম্পাদনা হল চলচ্চিত্র নির্মাণ এর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত কৌশল। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় চিত্র ও শব্দগ্রহণ সম্পূর্ণ হবার পর সেগুলি যথাযথভাবে সম্পাদনা করে তবেই একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র তৈরী হয়। পূর্বে সম্পাদনা করা হত আলোকচিত্রগ্রাহী ফিল্ম এর উপর, কিন্তু বর্তমানে এই ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমবর্ধমান।
একজন চলচ্চিত্র সম্পাদক আলোকচিত্রগ্রাহী ফিল্মের উপরে গৃহীত ছবিগুলি থেকে প্রথমে প্রয়োজনীয় শট গুলি আলাদা করেন, তারপর সেগুলি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে সাজিয়ে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রটি তৈরী করেন। চলচ্চিত্র সম্পাদনা এক বিশেষ ধরনের শিল্পনৈপুণ্য যা কিনা চলচ্চিত্রশিল্পের একান্ত নিজস্ব প্রয়োগকৌশল, আর এই কৌশলই চলচ্চিত্রকে বাকি সমস্ত পূর্বসূরী শিল্পের তুলনায় স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে। চলচ্চিত্র সম্পাদনাকে বলা হয়ে থাকে ‘অদৃশ্য শিল্প’[1] কারণ যদি চলচ্চিত্রটি সঠিকভাবে সম্পাদিত হয় তাহলে দর্শক এমনভাবে তার মধ্যে অঙ্গীভূত হয়ে পড়েন যে আলাদা করে সম্পাদকের কৃতিত্ত্ব চোখে পড়েনা।
চলচ্চিত্র সম্পাদনা প্রধানত এমন এক শিল্প, প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির মিশ্রণ, যা অনুসরণ করে একধিক শট এর বিভিন্ন অংশ সুসঙ্গত ক্রমে জুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সম্পাদক এই কাজটি যান্ত্রিকভাবে করতে পারেন না, উল্টে একটা চলচ্চিত্র শেষ পর্যন্ত কেমন হবে, তার অনেকটাই সম্পাদকের সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করে। চলচ্চিত্রটির কাহিনীর বিভিন্ন স্তর, ছবি, কথোপকথন, অভিনয়, সঙ্গীত, গতি, সবকিছুকে একত্রিত করে ছবিটিকে পুনর্নির্মাণ করতে হয় সম্পাদককে। তাই বিশ্বজুড়ে অনেক সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্র পরিচালক নিজের ছবি নিজেই সম্পাদনা করেন, যেমন আকিরা কুরোসাওয়া, বাহরাম বেজাই, কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়, ইত্যাদি।
ডিজিটাল সম্পাদনার আবির্ভাবের পর থেকে সম্পাদকের দায়িত্ত্বেরও পুনর্বিন্যাস হয়েছে। পুরোনো জমানায় চলচ্চিত্র সম্পাদক প্রধানত ছবিই সম্পাদনা করতেন। শব্দ ও সঙ্গীত পুনর্যোজনা, ভিস্যুয়াল এফেক্ট, ইত্যাদি অন্যান্য খুঁটিনাটি দেখাশোনা করতেন অন্য ব্যক্তি, অবশ্যই সম্পাদক এবং পরিচালকের নির্দেশনায়। বর্তমানে, বিশেষ করে কম বাজেটের ছবিতে, এই সমস্ত কিছুর দায়িত্ত্ব একজন সম্পাদকই সামলান, কখনো কখনো এক বা একাধিক সহকারীর সাহায্যে।