ডুরান্ড লাইন
দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত রেখা / From Wikipedia, the free encyclopedia
ডুরান্ড লাইন (পশতু: د ډیورنډ کرښه; উর্দু: ڈیورنڈ لائن; দারি: خط دیورند) হল আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত একটি সীমান্ত রেখা বা লাইন।[1] এ রেখাটি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে প্রায় ২,৬৭০ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক স্থল সীমান্ত।[1] এর পশ্চিম প্রান্তটি ইরানের সীমান্ত পর্যন্ত এবং পূর্ব প্রান্তটি চীনের সীমান্ত পর্যন্ত চলে গেছে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন ব্রিটিশ কূটনৈতিক মার্টিমার ডুরান্ড ও আফগান রাজা আমীর আবদুর রহমান খান তাদের নিজ নিজ দেশের সীমা নির্ধারণের জন্য ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ ভারত ও আফগানিস্তানের আমিরাতের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা হিসেবে ডুরান্ড লাইন প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে আফগানিস্তান ও ব্রিটিশ ভারতের সীমানা ডুরাল্ড লাইন থেকে নির্ধারিত হয়।
ব্রিটিশরা তখন আফগানিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করত। ১৮৯৩ সালের ১২ নভেম্বরে লিখিত একক পৃষ্ঠার একটি চুক্তিতে মোট সাতটি ছোট নিবন্ধ রয়েছে এবং এর মধ্যে ডুরান্ড লাইনের বাইরে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।[2] এরপর ১৮৯৪ সালে একটি যৌথ ব্রিটিশ-আফগান সীমানা নির্ধারণ জরিপ শুরু হয়, যা প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত কভার করে। ১৯১৯ সালের অ্যাংলো-আফগান চুক্তির মাধ্যমে লাইনটি সামান্য পরিবর্তিত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডুরাল্ড লাইনকেই নির্ধারিত করা হয়।
আফগানরা কখনো ডুরান্ড লাইনকে স্বীকার করেননি। কারণ এটি পশতুন উপজাতীয় এলাকা ও বেলুচিস্তান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে হওয়ার কারণে রাজনৈতিকভাবে জাতিগত পশতুনদের পাশাপাশি বেলুচ এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে বিভক্ত করেছে, যারা এখন সীমান্তের উভয় পাশে বাস করে। এটি আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ প্রদেশ থেকে উত্তর- পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান এবং গিলগিত- বালতিস্তানকে পৃথক করেছে। ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমানা হিসেবে বর্ণনা করা হয়।[3]
ডুরান্ড লাইন আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃত হলেও আফগানিস্তানে এটি অনেকাংশে অস্বীকৃত রয়ে গেছে। আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ দাউদ খান জোরালোভাবে এই সীমান্ত লাইনের বিরোধিতা করেন এবং এর বিপক্ষে একটি প্রচার যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। ২০১৭ সালে আন্তঃসীমান্ত উত্তেজনার সময় প্রাক্তন আফগান রাষ্ট্রপতি কারজাই বলেন যে, আফগানিস্তান দুই দেশের মাঝে সীমানা হিসেবে ডুরান্ড লাইনকে কখনোই স্বীকৃতি দেবে না। ২০২১ সালে আফগানিস্তান দখল করা তালেবানও ডুরাল্ড লাইনকে উভয় দেশের সীমানা হিসেবে মান্য করে না বলে জানা যায়। এ নিয়ে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কয়েকবার সংঘর্ষেও জড়িয়েছে।[4][5]