ভর–শক্তি সমতা
পদার্থবিদ্যার ভর ও শক্তির আপেক্ষিক তত্ত্ব / From Wikipedia, the free encyclopedia
পদার্থবিজ্ঞানে ভর–শক্তি সমতা বলতে একটি সিস্টেমের স্থিতিশীল কাঠামোতে ভর ও শক্তির মধ্যবর্তী সম্পর্ককে বোঝায়, যেখানে কেবল গুণাত্মক ধ্রুবক এবং পরিমাপের এককের ভিত্তিতে দুটি রাশির পার্থক্য করা হয়।[1][2] এই মূলনীতিটি পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইনের সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়: ।[3] সূত্রটিতে বলা হয়েছে যে সমমানের শক্তিকে (E) ভর (m) ও আলোর গতির (c = ~ ৩ × ১০৮ মি./সে.) বর্গের গুণফল হিসাবে গণনা করা যেতে পারে। একইভাবে, শক্তিযুক্ত যেকোন কিছুর ক্ষেত্রেও তার শক্তি E কে আলোর গতির বর্গ c2 দ্বারা ভাগ করলে অনুরূপ ভর m প্রদর্শন করে। যেহেতু প্রাত্যহিক এককগুলিতে আলোর গতি একটি বিরাট সংখ্যা তাই সূত্রটি সূচিত করে যে সামান্য পরিমাণ ভর সম্পন্ন একটি প্রাত্যহিক বস্তুতেও অভ্যন্তরীণভাবে অনেক বড় পরিমাণে শক্তি থাকে। রাসায়নিক বিক্রিয়া, পারমাণবিক বিক্রিয়া এবং অন্যান্য শক্তি রূপান্তরের ফলে কোনও ব্যবস্থা পরিবেশে তার শক্তি উপাদান হারাতে পারে (এবং এইভাবে কিছু ভর), উদাহরণস্বরূপ, আলোর তেজস্বী শক্তি বা তাপ শক্তি হিসাবে মুক্ত করা।
ভর-শক্তি সমতা মূলত আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা থেকে একটি হেঁয়ালি বা প্যারাডক্স হিসেবে উদ্ভূত হয় যা অঁরি পোয়াঁকারে কর্তৃক বর্ণিত হয়েছিলো।[4] ১৯০৫ সালের ২১ নভেম্বর আইনস্টাইন এটি তার একটি অ্যানাস মিরাবিলিস গবেষণাপত্র কোনো বস্তুর জড়তা কি তার শক্তি-পরিমাণের উপর নির্ভর করে?-তে (জার্মান: Ist die Trägheit eines Körpers von seinem Energieinhalt abhängig?) প্রস্তাবনা দেন।[5] আইনস্টাইনই প্রথম যিনি এই প্রস্তাবনা দেন যে ভর ও শক্তির সমতা একটি সাধারণ নীতি এবং স্থান-কালের প্রতিসাম্যের একটি পরিণতি।
ভর-শক্তি সমতার একটি পরিণতি হলো কোনো বস্তু সুস্থির হলেও এর মাঝে কিছু অভ্যন্তরীণ বা স্বকীয় শক্তি থাকে যা স্থিতি শক্তি হিসেবে পরিচিত, স্থিতি ভরের মত। যখন বস্তুটি গতি প্রাপ্ত হয় তখন এর মোট শক্তি এর স্থিতি শক্তির চেয়ে বেশি এবং সমভাবে এর মোট ভর (এক্ষেত্রে আপেক্ষিক ভরও বলা হয়) স্থিতি ভরের চেয়ে বেশি থাকে। এই স্থিতি ভরকে স্বকীয় বা স্থির ভরও বলা হয় কেননা এই গতি নির্বিশেষেও ইহা একই থাকে, এমনকি সাধারণ বা বিশেষ আপেক্ষিকতায় বিবেচিত চরম গতি বা মহাকর্ষেও।
এই ভর-শক্তি সমতা যেকোনো একক পদ্ধতিতে, ভরের একককে শক্তির এককে রূপান্তরের ক্ষেত্রেও অবদান রাখে (উল্টোটাও সত্যি)।