রোহিঙ্গা সংঘাত
মায়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব / From Wikipedia, the free encyclopedia
রোহিঙ্গা সংঘাত একটি চলমান সংঘাত যা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে (পূর্বে আরাকান, বার্মা) চলছে। এটিকে রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, রোহিঙ্গা বেসামরিক জনগণের উপর মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর দ্বারা সামরিক কঠোর ব্যবস্থা,[39][40][41] এবং বাংলাদেশ সীমান্তের নিকটে বুথিডং, মংডু ও রাথেডং টাউনশিপে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দ্বারা জঙ্গি হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[21][42][43]
Rohingya conflict | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: the মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত | |||||||
লালা রঙ্গে রাখাইন রাজ্যের সংঘাতপূর্ণ বুথিডং ও মংডু শহর চিহ্নিত মানচিত্র | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত British Burma (1947–1948) Union of Burma (1948–1962) |
| ||||||
Military governments (1962–2011)
| |||||||
Republic of the Union of Myanmar (since 2011) | ARSA (since 2016) | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
|
Current commanders: | ||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||
Tatmadaw
| Rohingya National Army (1998–2001)[3][12] | ||||||
শক্তি | |||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
2016–2018: 46 security personnel killed[lower-alpha 1] |
2016–2018: 475 killed[20][23] and 423 arrested[24][25] | ||||||
প্রধাণত রাখাইন বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক পার্থক্যের কারণে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। মিয়ানমারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রোহিঙ্গা মুসলিমরা ইংরেজদের মিত্র ছিল, এবং বিনিময়ে ইংরেজগণ রোহিঙ্গাদেরকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র দান করবে বলে অঙ্গিকার করে। এদিকে সেখানকার রাখাইন বৌদ্ধরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিদের মিত্র ছিল। স্বাধীনতার পর বার্মার নব্যসৃষ্ট মিলিত সরকার ছিল বৌদ্ধ প্রধান, এবং এরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করেন, যার ফলে রাষ্ট্রে রোহিঙ্গারা ব্যাপক আকারে পদ্ধতিগত বৈষম্যের শিকার হয়। রোহিঙ্গাদেরকে অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষায়তনিক, বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আপার্টহাইট এর সাথে তুলনা করেছেন,[44][45][46][47] যাদের মধ্যে বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকার আপার্টহাইট-বিরোধী আন্দোলনকারী ডেসমন্ড টুটুও রয়েছেন।[48]
১৯৪৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গা মুজাহিদীনরা উত্তর আরাকানে মায়ু উপদ্বীপের নিকট সর্বাধিকসংখ্যক রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বা ঐ অঞ্চলটিকে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, যাতে এই অঞ্চলকে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংযুক্ত করা যায়।[49] ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে ও ১৯৬০ এর দশকের শুরুর দিকে মুজাহিদীনরা এর শক্তি ও সমর্থনের বেশিরভাগই হারিয়ে ফেলে, যার ফলে এদের বেশিরভাগই সরকারী বাহিনীগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করে।[50][51]
১৯৭০ এর দশকে এই মুজাহিদীনদের অবশিষ্টাংশের দ্বারা (যারা আত্মসমর্পণ করেনি) রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনসমূহের পুনরাবির্ভাব ঘটে, এবং বর্মী সরকার এটিকে প্রতিহত করার জন্য ১৯৭৮ সালে তথাকথিত "বিদেশীদেরকে" বিতাড়িত করার জন্য অপারেশন ড্রাগন কিং নামে বৃহদায়তনে সামরিক কর্মকাণ্ড শুরু করলে এই যুদ্ধ চরমে পৌঁছায়।[52] ১৯৯০ এর দশকে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (RSO) ছিল বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বার্মায় হওয়া হামলাগুলোর প্রধান হর্তাকর্তা।[53] বর্মী সরকার এর জবাব দেয় অপারেশন ক্লিন এন্ড বিউটিফুল ন্যাশন নামে একটি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে, কিন্তু এটি আরএসও-কে নিরস্ত্রীকৃত করতে ব্যর্থ হয়।[54][55]
২০১৬ সালের অক্টোবরে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বর্মী বর্ডার পোস্টগুলোতে একটি নতুন বিদ্রোহী দল আক্রমণ করে, যার নাম ছিল হারাকাহ আল-ইয়াকিন, এর ফলে অন্তত ৪০ জন যোদ্ধার মৃত্যু হয়।[42][43][56] এটি ছিল ২০০১ সালের পর থেকে ১ম গুরুতর সংঘর্ষ। ২০১৬ সালের নভেম্বরে পুনরায় সহিংসতা শুরু হয়, এর ফলে ২০১৬ সালে মৃত্যুর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১৩৪ এ, এরপর ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টে পুনরায় সহিংসতার সূচনা হয়, যখন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (পূর্বে হারাকাহ আল-ইয়াকিন নামে পরিচিত) একসাথে ২৫টি পুলিস পোস্টে আক্রমণ করে, এবং এর ফলে ৭১ জনের মৃত্যু হয়।[21][57][58]
এরপর মিয়ানমার একটি সামরিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যার ফলে অফিস অফ দ্য ইউ.এন. হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (OHCHR) এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে, এবং ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন পেশ করে যেখানে বর্মী সেনাবাহিনীর দ্বারা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে পদ্ধতিগতভাবে মিয়ানমার থেকে বারবার অপমান ও সহিংসতার মাধ্যমে তাড়িয়ে দিচ্ছে।[59][60][61][62]
আসিয়ান পারলামেন্টারিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস (APHR) এর দেয়া ২০১৮ সালের মার্চ মাসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালের আগস্টের সামরিক অভিযানের পর ৪৩,০০০ রোহিঙ্গা পিতা মাতা তাদের সন্তানদেরকে হারিয়েছে এবং মৃত বলে মনে করছে।[63] হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় উঠে আসে, একই সময়ে ২৪,০০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, ১৮,০০০ রোহিঙ্গা নারী ও বালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, ১১৬,০০০ রোহিঙ্গাকে আঘাত করা হয়েছে, এবং ৩৬,০০০ রোহিঙ্গা বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে।