সংস্কৃতিতে সমুদ্র
From Wikipedia, the free encyclopedia
সংস্কৃতিতে সমুদ্র বহু শতাব্দী ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে আসছে। কারণ, মানুষ সমুদ্রের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে নানা পরস্পরবিরোধী উপায়ে: যেমন শক্তিশালী অথচ শান্ত, সুন্দর অথচ ভয়ংকর।[2] সাহিত্য, শিল্পকলা, কবিতা, চলচ্চিত্র, নাটক ও পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সংগীতের ন্যায় শিল্পরূপগুলিতে মানুষের সমুদ্রচেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। শিল্পকলায় নৌকার প্রাচীনতম উপস্থাপনাগুলি ৪০,০০০ বছরের পুরনো। সেই সময় থেকে বিভিন্ন দেশের শিল্পকলা ও সংস্কৃতিতে সমুদ্র চিত্রিত হয়ে আসছে। প্রতীততত্ত্বর দিক থেকে সমুদ্রকে নানাবিধ কাল্পনিক প্রাণীর বাসস্থান এক প্রতিকূল পরিমণ্ডল হিসেবে ধারণা করা হয়েছে: বাইবেলের লেভিয়াথান, জাপানি পুরাণের ইসোনাদে ও পরবর্তীকালের নর্স পুরাণকথার ক্রাকেন। মনঃচিকিৎসক কার্ল ইয়ুং-এর রচনায় সমুদ্র স্বপ্ন ব্যাখ্যায় ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অবচেতনের প্রতীক।
লামুর কুঁড়েঘরের দেওয়ালে আঁকা সাদামাটা ছবি থেকে জোসেফ টার্নার ও ওলন্দাজ স্বর্ণযুগীয় চিত্রকলায় অঙ্কিত সমুদ্রের ছবি – সমুদ্র ও জাহাজের ছবি নানাভাবে এসেছে চিত্রকলায়। জাপানি শিল্পী কাৎসুশিকা হোকুসাই কানাগাওয়ার লহরীতলে সহ সমুদ্রের নানা মেজাজ রঙিন ছাপচিত্রে ধরে রাখেন। হোমারের ওডিসি (খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী) মহাকাব্যের সময় থেকে সাহিত্যে সমুদ্রের বর্ণনা পাওয়া যায়। এদো যুগের জাপানি কবি মাৎসু বাসোর (松尾 芭蕉) (১৬৪৪-১৬৯৪) হাইকু কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে সমুদ্র বার বার ফিরে এসেছে।
হোমারের ওডিসি মহাকাব্যে সমুদ্র একটি প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। এই গ্রন্থে গ্রিক নায়ক অডিসিউসের দশ-বর্ষব্যাপী সমুদ্রযাত্রার বিবরণ পাওয়া যায়। কাব্যে দেখানো হয় যে, তিনি সমুদ্রের বিভিন্ন দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ঘরে ফিরছিলেন। মধ্যযুগে বিভিন্ন রোম্যান্সেও সমুদ্র চিত্রিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ট্রিস্টান কিংবদন্তির নাম করা যায়, যার বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিল কাল্পনিক দ্বীপ ও স্বয়ংচালিত জাহাজ। দ্য বুক অফ মার্গারি কেম্প প্রভৃতি কাহিনি ও কবিতার একটি সাধারণ বিষয় হল তীর্থযাত্রা। আদি আধুনিক যুগ থেকে আটলান্টিক দাস ব্যবসা ও শাস্তিমূলক পরিবহণের মাধ্যমে মানুষকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সমুদ্রযাত্রা করিয়ে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে নিয়ে যাওয়া হত, প্রায়শই স্থায়ীভাবে বসবাস করানোর জন্য। এর ফলে তীব্র সাংস্কৃতিক অনুরণন সৃষ্টি হয়। তাছাড়া মিশর, গ্রিস ও রোমান সভ্যতার যুগ থেকেই সমুদ্রে সমাধিদানের প্রথাটি নানাভাবে আচরিত হয়ে এসেছিল।
সমসাময়িক কালের সমুদ্র-অনুপ্রাণিত উপন্যাসগুলি লিখেছেন জোসেফ কনরাড, হারমান ওউক ও হারমান মেলভিল; সমুদ্র নিয়ে কবিতা লিখেছেন স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ, রুডইয়ার্ড কিপলিং ও জন মেসফিল্ড। কয়েক শতাব্দী ধরে সংগীতকেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে সমুদ্র। উদাহরণস্বরূপ সি শ্যান্টি লোকগান, রিচার্ড ওয়াগনারের দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান, ক্লড ডেবাসির লা মার (১৯০৩-০৫), চার্লস ভিলিয়ারস স্ট্যানফোর্ডের সংস অফ দ্য সি (১৯০৪) ও সংস অফ দ্য ফ্লিট (১৯১০), এডওয়ার্ড এলগারের সি পিকচারস (১৮৯৯) ও রালফ ভগান উইলিয়ামসের আ সি সিম্ফনি-র (১৯০৩–১৯০৯) নাম করা যায়।