সালাহুদ্দিন আইয়ুবি
মিশর ও সিরিয়ার সুলতান / From Wikipedia, the free encyclopedia
আবু নাসির সালাহুদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুব (কুর্দি: سەلاحەدینی ئەییووبی/Selahedînê Eyûbî; আরবি: صلاح الدين يوسف بن أيوب) (১১৩৭/১১৩৮ – ৪ মার্চ ১১৯৩) বা (বাংলায় প্রসিদ্ধ নাম) সালাহুদ্দিন আইয়ুবি[lower-alpha 1] ছিলেন মিশর ও সিরিয়ার প্রথম সুলতান এবং আইয়ুবীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। পাশ্চাত্যে তিনি সালাদিন বলে পরিচিত। তিনি কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর লোক ছিলেন।[4][5][6] শামে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে তিনি মুসলিম প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেন। ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে তার সালতানাতে মিশর, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, হেজাজ, ইয়েমেন এবং উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সালাহউদ্দিন আইয়ুবি | |||||
---|---|---|---|---|---|
মিশর ও সিরিয়ার সুলতান | |||||
রাজত্ব | ১১৭৪-১১৯৩ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ১১৭৪, কায়রো | ||||
পূর্বসূরি | নুরুদ্দিন জেনগি | ||||
উত্তরসূরি | আফযাল (সিরিয়া) আজিজ উসমান (মিশর) | ||||
জন্ম | ৫৩২ হিজরি (১১৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) তিকরিত, মসুল আমিরাত | ||||
মৃত্যু | ৪ মার্চ ১১৯৩ (৫৫ বছর) দামেস্ক, সিরিয়া | ||||
সমাধি | |||||
দাম্পত্য সঙ্গী | ইসমতউদ্দিন খাতুন | ||||
| |||||
রাজবংশ | আইয়ুবীয় | ||||
পিতা | নাজমুদ্দিন আইয়ুব | ||||
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম[1][2][3] |
১১৬৩ সালে তার জেনগি বংশীয় ঊর্ধ্বতন নুরউদ্দিন জেনগি তাকে ফাতেমীয় মিশরে প্রেরণ করেন। ক্রুসেডারদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্যের মাধ্যমে সালাহউদ্দীন ফাতেমীয় সরকারের উচ্চপদে পৌঁছান। ফাতেমীয় খলিফা আল আদিদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১১৬৯ সালে তার চাচা শেরকোহ মৃত্যুবরণ করলে আল আদিদ সালাহউদ্দীনকে তার উজির নিয়োগ দেন। নেতৃত্বাধীন খিলাফতে মুসলিমদের এমন পদ দেয়া বিরল ঘটনা ছিল। উজির থাকাকালে তিনি ফাতেমীয় শাসনের প্রতি বিরূপ ছিলেন। আল আদিদের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের আনুগত্য ঘোষণা করেন। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি ফিলিস্তিনে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালান, ইয়েমেনে সফল বিজয় অভিযানের আদেশ দেন এবং উচ্চ মিশরে ফাতেমীয়পন্থি বিদ্রোহ উৎখাত করেন।
১১৭৪ সালে নূরউদ্দিনের মৃত্যুর অল্পকাল পরে সালাহউদ্দীন সিরিয়া বিজয়ে ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব দেন। দামেস্কের শাসকের অনুরোধে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে শহরে প্রবেশ করেন। ১১৭৫ সালের মধ্যভাগে তিনি হামা ও হিমস জয় করেন। জেনগি নেতারা তার বিরোধী হয়ে পড়ে। সরকারিভাবে তারা সিরিয়ার শাসক ছিল। এরপর শীঘ্রই তিনি জেনগি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন এবং আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতাদি কর্তৃক মিশর ও সিরিয়ার সুলতান ঘোষিত হন। উত্তর সিরিয়া ও জাজিরায় তিনি আরও অভিযান চালান। এসময় হাশিশীনদের দুটি হত্যাচেষ্টা থেকে তিনি বেঁচে যান। ১১৭৭ সালে তিনি মিশরে ফিরে আসেন। ১১৮২ সালে আলেপ্পো জয়ের মাধ্যমে সালাহুদ্দিন সিরিয়া জয় সমাপ্ত করেন। তবে জেনগিদের মসুলের শক্তঘাঁটি দখলে সমর্থ হননি।
সালাহউদ্দীনের ব্যক্তিগত নেতৃত্বে আইয়ুবী সেনারা ১১৮৭ সালে হাত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের পরাজিত করে। এর ফলে মুসলিমদের জন্য ক্রুসেডারদের কাছ থেকে ফিলিস্তিন জয় করা সহজ হয়ে যায়। এর ৮৮ বছর আগে ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখল করে নিয়েছিল। ক্রুসেডার ফিলিস্তিন রাজ্য এরপর কিছুকাল বজায় থাকলেও হাত্তিনের পরাজয় এই অঞ্চলে মুসলিমদের সাথে ক্রুসেডার সংঘাতের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সালাহউদ্দীন ছিলেন মুসলিম, আরব, তুর্কি ও কুর্দি সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।[7] ১১৯৩ সালে তিনি দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন। তার অধিকাংশ সম্পদ তিনি তার প্রজাদের দান করে যান। উমাইয়া মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। সেখানে তার মাজার অবস্থিত।