সোনহাই সাম্রাজ্য
From Wikipedia, the free encyclopedia
সোনহাই বা সোংহাই সাম্রাজ্য ছিল ১৫শ এবং ১৬শ শতাব্দীতে সাহিল অঞ্চলের পশ্চিম অংশ জুড়ে বিস্তৃত একটি মুসলিম সাম্রাজ্য। নিজের শীর্ষে এটি ইতিহাসের বৃহত্তম আফ্রিকান সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে একটি ছিল। রাজ্যটির নাম তার ঐতিহাসিক বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী ও শাসকশ্রেণী অভিজাত সোনহাই বা সোংহাই জাতির নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে। সাম্রাজ্যটির প্রথম সম্রাট ও সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজা সুন্নি আলি গাওকে নিজের সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন; যদিও ১১ শতক থেকে গাও এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে একটি সোনহাই রাজ্য বিদ্যমান ছিল। তবে তা কখনো একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের রূপ লাভ করতে সক্ষম হয়নি। সুন্নি আলীই প্রথম একে একটি সাম্রাজ্যিক রূপ দান করেন এবং এটি একটি আঞ্চলিক রাজ্য থেকে একটি বৃহৎ প্রভাবশালী সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে ওঠে। তারপর প্রথম আসকিয়া মুহাম্মদ একে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।
সোনহাই/ সোংহাই সাম্রাজ্য | |||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আনু. ১৪৩০ এর দশক–১৫৯১ | |||||||||||||||
সোংহাই সাম্রাজ্যের অঞ্চলগুলি | |||||||||||||||
সোনহাই সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ বিস্তৃতি। | |||||||||||||||
অবস্থা | সাম্রাজ্য | ||||||||||||||
রাজধানী | গাও[1] | ||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা |
| ||||||||||||||
ধর্ম | |||||||||||||||
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | সোনহাই | ||||||||||||||
সরকার | সাম্রাজ্য | ||||||||||||||
(সম্রাট) | |||||||||||||||
• ১৪৬৪–১৪৯২ | সুন্নি আলি | ||||||||||||||
• ১৪৯২–১৪৯৩ | সুন্নি বারু | ||||||||||||||
• ১৪৯৩–১৫২৮ | আসকিয়া মুহাম্মদ | ||||||||||||||
• ১৫২৯–১৫৩১ | আসকিয়া মুসা | ||||||||||||||
• ১৫৩১–১৫৩৭ | আসকিয়া মুহাম্মদ বেনকান | ||||||||||||||
• ১৫৩৭–১৫৩৯ | আসকিয়া ইসমাঈল | ||||||||||||||
• ১৫৩৯–১৫৪৯ | প্রথম আসকিয়া ইসহাক | ||||||||||||||
• ১৫৪৯–১৫৮২/১৫৮৩ | আসকিয়া দাউদ | ||||||||||||||
• ১৫৮৮–১৫৯২ | দ্বিতীয় আসকিয়া ইসহাক | ||||||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||||||
• গাও রাজ্য সোনহাই রাজ্য দ্বারা প্রতিষ্ঠাপিত | আনু. ১০০০ | ||||||||||||||
• মালি সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা | আনু. ১৪৩০ এর দশক | ||||||||||||||
• সুন্নি রাজবংশ এর উদ্ভব | ১৪৬৮ | ||||||||||||||
• আসকিয়া রাজবংশ এর উত্থান | ১৪৯৩ | ||||||||||||||
• সোনহাই সাম্রাজ্যে সাদি বিদ্রোহ | ১৫৯১ | ||||||||||||||
• অবশিষ্ট রাজসদস্য দক্ষিণে বর্তমান নাইজারে চলে যায় এবং বিভিন্ন ছোট রাজ্য গঠন করে | ১৫৯১ | ||||||||||||||
• ড্যান্ডি রাজ্যের সর্বশেষ আসকিয়াকে ফ্রান্স কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুতকরণ | ১৯০১ | ||||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||||
১৫৫০ [2] | ৮,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৩,১০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||||
মুদ্রা |
| ||||||||||||||
| |||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ |
রাজ্যটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি ছিল টিমবুকটু ও জেনি, যেখানে নগর-কেন্দ্রিক বাণিজ্য বিকাশ লাভ করেছিল এবং এই রাজ্য দুইটি যথাক্রমে ১৪৮৬৮ এবং ১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্নি আলির হাতে বিজিত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সোনহাই সাম্রাজ্য সুন্নি রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছিল ( আনু. ১৪৬৪ থেকে), কিন্তু পরে এটি আসকিয়া রাজবংশ (১৪৯৩-১৯০১) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। কারণ, সুন্নি আলির মৃত্যুর পরে তার ছেলে সুন্নি বারু পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। তবে সুন্নি বারুকে কখনোই একজন বিশ্বস্ত মুসলিম হিসাবে দেখা যায়নি এবং এই জন্য যিনি আসকিয়া কর্তৃক হুমকির সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে আসকিয়া মোহাম্মদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তখন থেকেই সাম্রাজ্যটি আসকিয়া রাজবংশ কর্তৃক শাসিত হওয়া শুরু করে।
১৩ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে গাও এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং তা দ্রুত সম্প্রসারিত মালি সাম্রাজ্যের আগ্রহকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং এর ফলে ১৩শ শতকের শেষের দিকে মালি সাম্রাজ্য গাও জয় করে নেয়। ১৪ শতকের শেষ পর্যন্ত গাও মালি সাম্রাজ্যের কমান্ডের অধীনে ছিল এবং এরপর থেকে মালি সাম্রাজ্য বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে এবং সেই সুযোগ সোনহাইরা গাও-এর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। সোনহাই শাসকরা পরবর্তীতে নিজেদের সোনহাই শাসন সম্প্রসারণের জন্য দুর্বল ও ক্রমশ পতিত হতে থাকা মালি সাম্রাজ্যের দূর্বলতা ও বিশৃঙ্খলাকে কাজে লাগিয়েছিল।
সুন্নি আলির শাসনের অধীনে সোনহাই সাম্রাজ্য মালি সাম্রাজ্যের বিশাল অঞ্চলকে শুষে নিয়ে তার আয়তন, সম্পদ এবং ক্ষমতায় মালি সাম্রাজ্যকে ছাড়িয়ে যায়। সুন্নি আলির তার পুত্র এবং উত্তরাধিকারী সোনি বারু নিজের পিতার অন্যতম সেনাপতি মুহাম্মদ তুরে কর্তৃক উৎখাত হন। তুর সাধারণভাবে আস্কিয়া দ্য গ্রেট নামে পরিচিত, যিনি সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংস্কার প্রতিষ্ঠা করে সোনহাই সাম্রাজ্যকে আফ্রিকার বৃহত্তম সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।
তবে আসকিয়ার উত্তরসূরিদের ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থান সাম্রাজ্যকে পতন ও অস্থিতিশীলতায় পতিত হতে বাধ্য করে। তবে আসকিয়ার আত্মীয়রা রাজ্যটি পরিচালনা করার বহু চেষ্টা করেছিল; কিন্তু সাম্রাজ্যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং লাগাতার সংঘটিত বেশ কয়েকটি গৃহ যুদ্ধ সাম্রাজ্যের অব্যাহত পতন নিশ্চিত করে দিয়েছিল; বিশেষ করে প্রথম আসকিয়া ইসহাক শাসনামলে। এর পর আসকিয়া দাউদের শাসনামলে সাম্রাজ্যটি একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কিছু সামরিক সাফল্যের স্বাদ অনুভব করেছিল; তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
সোনহাই সাম্রাজ্যের সর্বশেষ শাসক দ্বিতীয় আসকিয়া ইসহাক দাউদের মৃত্যুর পর দীর্ঘ রাজবংশীয় সংগ্রামের মাধ্যমে আল মনসুর ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দে আহমদ আল-মনসুর সাম্রাজ্যের সাম্প্রতিক সংঘটিত গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে জুদার পাশার নেতৃত্বে একটি বাহিনী পাঠান, যাতে সোনহাই রাজ্য জয় করা যায় এবং ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য রুটের নিয়ন্ত্রণ লাভ করা যায়। ১৫৯১ সালে টন্ডিবির যুদ্ধে পরাজয়ের পর সোনহাই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।