পরিগণনা
পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ / From Wikipedia, the free encyclopedia
পরিগণনা বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে বিশেষ এক ধরনের ভৌত যন্ত্রের একদিক দিয়ে প্রবিষ্ট কিছু প্রতীকের ধারার (যেগুলিকে আগম বা ইনপুট বলে) উপরে যন্ত্রটির ভেতরে পূর্বস্থাপিত একটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি (অর্থাৎ কতগুলি সসীমসংখ্যক ও সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নিয়মের অনুক্রম) ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন বা নির্বাহ করে প্রবিষ্ট প্রতীকগুলির রূপগুলিতে (অর্থাৎ প্রতীকগুলিতে নিহিত অর্থ না বুঝেই) উদ্দীষ্ট রূপান্তর সাধন করে যন্ত্রের অন্য দিক দিয়ে বহির্গত (যেগুলিকে নির্গম বা আউটপুট বলে) করা হয়, যেখানে প্রতীকগুলি বাস্তব বা বিমূর্ত বোধগম্য ও অর্থবহ কোনও কিছুর (যেমন সংখ্যা, পাঠ্যবস্তু, শ্রাব্য, চিত্র, চলমান চিত্র, এমনকি অন্য আরেকটি পদ্ধতি) প্রতিনিধিত্ব করে।[1][2] একে ইংরেজি পরিভাষায় "কম্পিউটেশন" (Computation) বলে। পরিগণনা প্রক্রিয়াটিতে আগম থেকে নির্গম পাওয়ার জন্য যে সসীমসংখ্যক সুস্পষ্ট নিয়মের অনুক্রম ভৌত যন্ত্রে বাস্তবায়ন করা হয়, তাকে কলনবিধি বা ইংরেজি পরিভাষায় "অ্যালগোরিদম" (Algorithm) বলে। যে ভৌত যন্ত্রটি এই পরিগণনা কার্যটি নির্বাহ করে, তাকে পরিগণক বা ইংরেজি পরিভাষায় "কম্পিউটার" (Computer) বলে।
পরিগণনার উপরোক্ত সংজ্ঞাটি মূলত বর্তমান বিশ্বে সর্বত্র ব্যবহৃত আধুনিক ইলেকট্রনীয় দ্বি-আংকিক পরিগণক যন্ত্রের (ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার) জন্য প্রযোজ্য। এই যন্ত্রটি তথ্য-উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। এই পরিগণক যন্ত্রে বাস্তব বিশ্বের সব ধরনের তথ্য-উপাত্তকে শেষ বিচারে দুইটি মাত্র প্রতীকের ধারায় (০ ও ১ এই দুইটি মাত্র অংক) রূপান্তরিত করা হয়। এভাবে বাস্তব বিশ্বের তথ্য-উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণের সমস্যাটিকে পরিগণক যন্ত্রের ভেতরে কলনবিধির মাধ্যমে ০ ও ১-এর প্রতীকের ধারার আগম-নির্গম সম্পর্ক বাস্তবায়নকারী একটি সমস্যা হিসেবে সমাধা করা হয়, যে সমস্যাটিকে পরিগণনামূলক সমস্যা (Computational problem) বলে। তথ্য ও পরিগণনার তাত্ত্বিক ভিত্তি, কলনবিধিসমূহ ও এগুলির পরিগণক যন্ত্রে বাস্তবায়ন যে উচ্চশিক্ষায়তনিক শাস্ত্রে অধ্যয়ন করা হয়, তাকে পরিগণক বিজ্ঞান বা কম্পিউটার বিজ্ঞান (Computer science) বলে।
২১শ শতকে এসে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের বিভিন্ন শাখায় উদ্ভূত বিপুল পরিমাণ তথ্য-উপাত্তবিশিষ্ট জটিল কোনও সমস্যার প্রথমে একটি গাণিতিক প্রতিমান নির্মাণ করা হয় এবং অতঃপর এই গাণিতিক প্রতিমানটিকে একটি পরিগণনামূলক প্রতিমানে রূপান্তরিত করা হয়, যাতে এটিকে কোনও পরিগণক যন্ত্রে পরিগণনামূলক সমস্যা হিসেবে সমাধান করা যায় (যাকে পরিগণক ছদ্মায়ন বা ইংরেজিতে "কম্পিউটার সিমুলেশন" বলে)। এভাবে যান্ত্রিক স্বয়ংক্রিয় পরিগণনার সাহায্যে বিভিন্ন দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত সমস্যার অপেক্ষাকৃত দ্রুত সমাধান বের করা যায়। এই বিষয়টির বিভিন্ন দিক বর্তমানে পরিগণনামূলক বিজ্ঞান নামক উদীয়মান আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্রটিতে অধ্যয়ন করা হয়।