পরিবহন প্রকৌশল
From Wikipedia, the free encyclopedia
পরিবহন প্রকৌশল বলতে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে বিদ্যমাণ ব্যবস্থা পদ্ধতিকে নিরাপদ, সাশ্রয়ী, দ্রুত, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ, সহজ, সুষ্ঠু, ও পরিবেশগতভাবে সামঞ্জস্য করে তুলবার প্রয়াসে গৃহীত পরিকল্পনা, নির্বাহী নকশা ও ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্তসমূহের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক নীতি ও আধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে গড়ে ওঠা শাস্ত্রকে বোঝায়। পরিবহন প্রকৌশল পুরকৌশলের একটি উপবিভাগ। পুরকৌশল পেশার ক্ষেত্রে পরিবহন প্রকৌশলের গুরুত্ব সম্পর্কে আন্দাজ করা যেতে পারে ASCE (মার্কিন পুরকৌশলী সমিতি) নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত পরিবহন সংক্রান্ত অধিদপ্তরগুলোর সংখ্যা দেখে। ASCE সংস্থাটির ১৮টি দপ্তরের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ দপ্তর তথা ছয়টি দপ্তর কেবল পরিবহন সংক্রান্ত। এগুলো হচ্ছেঃ উড়োপথ, আকাশপথ পরিবহন, মহাসড়ক, পাইপ-লাইন, জলপথ, বন্দর, উপকূল ও সমুদ্রপথ; এবং নগরকেন্দ্রিক পরিবহন।
বিশ্বকোষীয় পর্যায়ে যেতে এই নিবন্ধে আরো বেশি অন্য নিবন্ধের সাথে সংযোগ করা প্রয়োজন। |
বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন সংস্থা (BRTC) পরিবহন ব্যবস্থাগুলো তদারক করে। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে বাংলাদেশ সরকারের 'সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়' 'রেল মন্ত্রণালয়', 'বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়' নামে তিনটি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
পরিবহন প্রকৌশলের পরিকল্পনার দর্শনগুলো সাধারণত নগর পরিকল্পনার উপাদানের সাথে সম্পর্কিত; এবং এ পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- কারিগরি পূর্বাভাস বিবেচনায় নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রণয়ন যা রাজনৈতিক নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়। যাত্রীদের ভ্রমণ বিষয়ে যে কারিগরি পূর্বাভাস দেওয়া হয় সেখানে মূলত একটি নগর পরিবহন পরিকল্পনা মডেল উপস্থাপন করা হয়। এ মডেলে থাকে ভ্রমণ উৎপত্তি (কতটি ভ্রমণ, কী উদ্দেশ্যে), ভ্রমণ বণ্টন (গন্তব্য স্থল—কোথায় সফরকারী যাচ্ছেন), পছন্দসই মাধ্যম (কোন ধরনের যান-বাহন যাত্রী বাছাই করেছেন) এবং গমনপথ নিয়োজন (কোন রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে) এ চারটি বিষয়। যাত্রীদের ভ্রমণগুলোই পরিবহন প্রকৌশলের মূল কেন্দ্রবিন্দু কারণ যেকোন পরিবহন ব্যবস্থায় যানবাহনের চাহিদার শীর্ষমান এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণগুলোর কারণেই হয়ে থাকে।
পুরকৌশলীদের দ্বারা চর্চিত পরিবহন প্রকৌশল প্রাথমিকভাবে গুরুত্বারোপ করে যে সব বিষয়ের উপর সে্গুলো হচ্ছে- পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং পরিবহন সুবিধাগুলো ঠিক মতো কাজ করছে কি না তা তদারকি করা। নকশাকরণ বলতে বোঝানো হয়- পরিবহন সুবিধাগুলোর মাত্রা ঠিক করা (যেমনঃ কয়টি লেন, অথবা কী পরিমাণ ক্ষমতা আছে), সড়ক নির্মাণে মাল-মশলাগুলোর উপাদান বাছাই করা এবং সড়কের পুরুত্ব কী হবে তা হিসেব করা, সড়কপথের অনুভূমিক ও উলম্ব দিকের জ্যামিতিক গঠন কাঠামো নির্ধারণ করা ইত্যাদি।
যে কোন পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে একজন প্রকৌশলী অবশ্যই প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করবেন। এই সব তথ্যকণিকার মধ্যে আছে- (১) জনসংখ্যা (২) ভূমি ব্যবহার (৩) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (৪) পরিবহন সুবিধাদি ও সেবাসমূহ (৫) সফর সজ্জা ও সফরের পরিমাণ (৬) প্রচলিত আইন ও অধ্যাদেশমালা (৭) সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থায়নের উৎস (৮) এলাকার মূল্যবোধ ও আকাঙ্ক্ষা
কার্যনির্বাহকরণ ও ব্যবস্থাপনার সময় নজর রাখতে হবে যে, যান-বাহনগুলো নির্বিঘ্নে ও স্বচ্ছন্দ্যে পথ চলতে পারছে কী না। এটি নিশ্চিত করবার জন্য প্রচলিত সনাতন পদ্ধতিগুলো হচ্ছে যথাযথ চিহ্ন, সংকেত, নির্দেশাংক ও টোল-ব্যবস্থা। তুলনামূলক অধুনা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে আছে- ITS বা বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা, ভ্রমণকারীর তথ্যভিত্তিক আধুনিক পদ্ধতি (যেমনঃ পরিবর্তনশীল বার্তা নিশানা); আধুনিক যান-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাদি (যেমনঃ র্যাম্প মিটার) ইত্যাদি।