পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্ম
পূর্ব রোমান বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যের গ্রিক ও সিরীয় ভাষাভাষী জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থেকে উদ্ / From Wikipedia, the free encyclopedia
পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্ম বলতে সেইসব খ্রিস্টান ঐতিহ্য ও মণ্ডলী পরিবারকে বোঝায় যেগুলি আদিতে ধ্রুপদী প্রাচীন যুগ ও বিলম্বিত প্রাচীন যুগে পশ্চিম এশিয়া, মিশর, উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ-ইউরোপ, আনাতোলীয় উপদ্বীপ, দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূল এবং দূরপ্রাচ্যের (পূর্ব এশিয়ার) কিয়দংশে বিকাশ লাভ করেছিল।[1] পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্ম পরিভাষাটি দিয়ে একটিমাত্র অভিন্ন ধর্ম-মৈত্রী বা ধর্ম-সম্প্রদায় নির্দেশ করা হয় না। পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্মের প্রধান প্রধান সংগঠনগুলি হল পূর্বদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলী, প্রাচ্যদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলীসমূহ, পূর্বদেশীয় ক্যাথলিক মণ্ডলীসমূহ (যেগুলি রোমের পোপরাজ্যের সাথে পুনরায় মৈত্রী স্থাপন করেছে কিন্তু এখনও পূর্বদেশীয় উপাসনাপদ্ধতি বজায় রেখেছে), প্রতিবাদী পূর্বদেশীয় খ্রিস্টান মণ্ডলীসমূহ[2] (যেগুলি ধর্মতত্ত্বের নিরিখে প্রতিবাদী কিন্তু সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুযায়ী পূর্বদেশীয় খ্রিস্টান) এবং ঐতিহাসিক পূর্বের মণ্ডলী থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়সমূহ। পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্মের মণ্ডলীগুলি সাধারণত নিজেদেরকে "পূর্বদেশীয়" বলে নির্দেশ করে না, তবে পূর্বের আসিরীয় মণ্ডলী এবং পূর্বের প্রাচীন মণ্ডলী এর ব্যতিক্রম।
পূর্বদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলী
আধিপত্য বিস্তারকারী ধর্ম (৭৫%-এর অধিক)
আধিপত্য বিস্তারকারী ধর্ম (৫০–৭৫%)
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু ধর্ম (২০–৫০%)
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু ধর্ম (৫–২০%) সংখ্যালঘু ধর্ম (১–৫%) |
প্রাচ্যদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলী
আধিপত্য বিস্তারকারী ধর্ম (৭৫%-এর অধিক)
আধিপত্য বিস্তারকারী ধর্ম (৫০–৭৫%)
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু ধর্ম (২০–৫০%)
গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু ধর্ম (৫–২০%) সংখ্যালঘু ধর্ম (১–৫%) |
ঐতিহাসিকভাবে পূর্বদেশীয় মণ্ডলী পরিভাষাটি রোমের পবিত্র পোপরাজ্যকেন্দ্রিক লাতিন মণ্ডলী বা পশ্চিমা মণ্ডলীর সাথে (যেটি লাতিন উপাসনাপদ্ধতি ব্যবহার করে) পার্থক্য করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানে "পশ্চিমা" ও "পূর্বদেশীয়" পরিভাষাগুলি খ্রিস্টধর্মের ভৌগোলিক বিভাজন থেকে উদ্ভূত হয়, যা মূলত গ্রিক বা হেল্লেনীয় পূর্বদেশ এবং লাতিন পাশ্চাত্যের মধ্যবর্তী সাংস্কৃতিক বিভাজন এবং ৩৯৫ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্য ও পূর্বদেশীয় বাইজেন্টীয় রোমান সাম্রাজ্য - এই দুইয়ের মধ্যকার রাজনৈতিক বিভাজনের একটি প্রতিচ্ছবি। ১৬শ শতকের প্রতিবাদী সংস্কারের পর থেকে "পশ্চিমা খ্রিস্টধর্ম" বলতে কেবলমাত্র লাতিন মণ্ডলীকেই নয়, বরং প্রতিবাদী মতবাদ এবং স্বাধীন ক্যাথলিকবাদকেও বোঝায়, এবং পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্ম বলতে এগুলির বাইরে অবস্থিত সমস্ত খ্রিস্টান ধর্মসম্প্রদায়কে বোঝায়।[3] এখানে উল্লেখ্য যে পূর্বদেশীয় কিছু মণ্ডলীর নিজেদের মধ্যে যে ঐতিহাসিক ও ধর্মতাত্ত্বিক সম্পর্ক বিদ্যমান, তার পরিবর্তে পশ্চিমা মণ্ডলীর সাথে তাদের ঐরূপ সম্পর্ক আরও বেশি ঘনিষ্ঠ।
বর্তমানে পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে বৃহৎ মণ্ডলীটির নাম হল পূর্বদেশীয় সনাতনপন্থী মণ্ডলী। একারণে প্রায়শই পূর্বদেশীয় খ্রিস্টধর্মকে অনেক সময় "সনাতনপন্থী খ্রিস্টধর্ম" নামে ডাকা হয়ে থাকে। তবে সঠিকভাবে বলতে গেলে বেশীরভাগ খ্রিস্টান ধর্মসম্প্রদায়, তা সে পশ্চিমা বা পূর্বদেশীয় যাই হোক না কেন, নিজেদেরকে "সনাতনপন্থী" (অর্থাৎ "সঠিক বিশ্বাসের অনুসারী") ও "ক্যাথলিক" বা "বিশ্বজনীন" বিবেচনা করে এবং তারা সবাই ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে নিকায়েয়ার সম্মেলনে তালিকাভুক্ত খ্রিস্টান মণ্ডলীর চারটি চিহ্ন গ্রহণ করেছে, যেগুলি হল "এক, পবিত্র, বিশ্বজনীন ও খ্রিস্টের বারোশিষ্যভিত্তিক" (গ্রিক: μία, ἁγία, καθολικὴ καὶ ἀποστολικὴ ἐκκλησία)।[টীকা 1]
পূর্বদেশীয় মণ্ডলীগুলি (কিছু উপাসনা-পদ্ধতিহীন বিরুদ্ধবাদী সংগঠন ব্যতীত) একাধিক ধরনের উপাসনামূলক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে, যেমন আলেকজান্দ্রীয় আচার-অনুষ্ঠান, আর্মেনীয় আচার-অনুষ্ঠান, বাইজেন্টীয় আচার-অনুষ্ঠান, পূর্ব সিরীয় আচার-অনুষ্ঠান (যা পারসিক বা ব্যাবিলনীয়/ক্যালডীয় আচার-অনুষ্ঠান নামেও পরিচিত) এবং পশ্চিম সিরীয় আচার-অনুষ্ঠান (যা অ্যান্টিয়কীয় আচার-অনুষ্ঠান নামেও পরিচিত)।