বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি
ব্রিটিশ ভারতের প্রশাসনিক বিভাগ / From Wikipedia, the free encyclopedia
বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি (ইংরেজি: Bengal Presidency), সরকারিভাবে ফোর্ট উইলিয়ামের প্রেসিডেন্সি (ইংরেজি: Presidency of Fort William) এবং পরবর্তীকালে বাংলা প্রদেশ (ইংরেজি: Bengal Province) ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি প্রশাসনিক বিভাগ। অতীতে এই প্রেসিডেন্সির এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার যে সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটেছিল, তার মধ্যে অধুনা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। বাংলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য) জাতি-ভাষাগত অঞ্চলটি ছিল বাংলার মূল ভূখণ্ডের অন্তর্গত। ফোর্ট উইলিয়ামকে ঘিরে গড়ে ওঠা শহর কলকাতা ছিল বাংলা প্রেসিডেন্সির রাজধানী। বাংলার গভর্নরগণ বহু বছর ধরে একই সঙ্গে ভারতের ভাইসরয়ের দায়িত্বও পালন করতেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত কলকাতাই কার্যত ছিল ভারতের রাজধানী।
ফোর্ট উইলিয়ামের প্রেসিডেন্সি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৬৯৯–১৯৪৭ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৮৬০-এর দশকে বাংলা প্রেসিডেন্সির এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার মানচিত্র | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
অবস্থা | ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
রাজধানী | কলকাতা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | ইংরেজি (সরকারি); চীনা, বাংলা, হিন্দুস্তানি, মালয় | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
গভর্নর | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
• ১৬৯৯-১৭০১ (প্রথম) | স্যার চার্লস আইয়ার | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
• ১৯৪৬-১৯৪৭ (সর্বশেষ) | ফ্রেডেরিক বারোজ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আইন-সভা | বাংলার আইনসভা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
• উচ্চকক্ষ | বঙ্গীয় আইন পরিষদ (১৮৬২-১৯৪৭) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
• নিম্নকক্ষ | বঙ্গীয় আইনসভা (১৯৩৫-১৯৪৭) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৬১২ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৭৫৭ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৭৬৪ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৮২৬ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৮৩২-১৮৪২ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৮৬৬ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
• গারো পাহাড় সংযুক্তকরণ | ১৮৭২ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
• বঙ্গভঙ্গ | ১৯০৫ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯১২ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৪৭ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মুদ্রা | ভারতীয় টাকা, পাউন্ড স্টারলিং, স্ট্রেইটস ডলার | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ |
১৬১২ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের শাসনকালে মুঘল বাংলা সুবায় স্থাপিত বাণিজ্যকুঠি থেকে বাংলা প্রেসিডেন্সির উত্থান ঘটে। একচেটিয়া বাণিজ্যের রাজকীয় সনদপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সংস্থা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় প্রভাব বিস্তারের জন্য অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। ১৭৫৭ সালে ষড়যন্ত্রপূর্বক বাংলার নবাবকে সিংহাসনচ্যূত করার পর এবং তারপরে ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তর অংশে নিজ কর্তৃত্ব বিস্তার করে। এইভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিই উপমহাদেশের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে পরিণত ভারতে কোম্পানি শাসনের সূত্রপাত ঘটে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ক্রমশ কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার খর্ব করতে শুরু করে। ১৮৫০-এর দশকের মধ্যে কোম্পানি আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ওঠে।[2] ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পরে ব্রিটিশ সরকার ভারতের শাসনভার স্বহস্তে তুলে নেয়। বাংলা প্রেসিডেন্সি পুনর্গঠিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলা হয়ে ওঠে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম উৎসস্থল তথা বাংলার নবজাগরণের কেন্দ্রবিন্দু।
বাংলা ছিল ব্রিটিশ ভারতের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা-সংক্রান্ত কেন্দ্র। আদ্য-শিল্পায়নের যুগে ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লবে বাংলা গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছিল। যদিও কিছুকাল পরেই টিপু সুলতানের শাসনে মহীশূর রাজ্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।[3] ১৮৬৭ সালে বাংলা পুনর্গঠনের সময় পেনাং, সিঙ্গাপুর ও মালাক্কাকে পৃথক করে গঠিত হয় স্ট্রেইটস সেটলমেন্টস।[4] ব্রিটিশ ব্রহ্মদেশ ভারতের একটি প্রদেশে এবং পরবর্তীকালে একটি পৃথক রাজকীয় উপনিবেশে পরিণত হয়। সমর্পিত ও বিজিত প্রদেশসমূহ ও পাঞ্জাব স পশ্চিমের এলাকাগুলি অধিকতর পুনর্গঠিত হয়। উত্তরপূর্বের এলাকাগুলি নিয়ে গঠিত হয় ঔপনিবেশিক আসাম। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভাজনের সময় ধর্মীয় জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাও বিভাজিত হয়।