মঙ্গলে হিমবাহ
মঙ্গলের হিমবাহ / From Wikipedia, the free encyclopedia
মঙ্গলের হিমবাহ বলতে, এখনকার মঙ্গলের ভূত্বকের ওপর নানা জায়গায় পাওয়া ছাপ ও আকৃতিগুলিকের ধরা হয়, যেগুলিকে মনে করা হয়, স্বল্প অতীতেই বরফের ধারা থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং মনে করা হয়, অতীতে এরকম আরও অনেক হিমবাহ সারা মঙ্গলেই ছড়িয়ে ছিল।[1][2] ওই অংশের ভূমির ওপর লোবেট উত্তল দেখে বোঝা যায়, সেখানে সান্দ্র দ্রবণের ধারা ছিল, এবং লোবেট ডেব্রিস এপ্রোন, প্রমাণ করে যে এর চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য ছিল অ-নিউটনীয় সান্দ্র ধারা, যা এখন সর্বসম্মত ভাবে হিমবাহ বলেই প্রমাণিত হয়েছে।[1][3][4][5][6][7][8][9][10]
যাইহোক, অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও মঙ্গলের ভূমির ওপরে দেখা যায়, যা বরফের ধারার উপস্থিতির সঙ্গে জড়িত, যেমন বিভাজিত অঞ্চল, রেখাযুক্ত ভরাট উপত্যকা, এককেন্দ্রিক গভীর গর্ত, খাঁজ কাটা উঁচু পাড় ইত্যাদি। [1][3][9][10][11][12][13] মঙ্গলের বিষুবীয় মধ্যভাগ ও মেরু অঞ্চলের যে ছবি দেখা যায়, তাতে সেখানকার নানারকম ভূমি গঠন দেখে বোঝা যায় যে হিমবাহের বরফের ঊর্দ্ধপাতন ঘটার ফলে তা সৃষ্ট হয়েছে।[14][15][16]
বর্তমানে, মঙ্গলের মেরু অঞ্চলের দিকে প্রায় ৩০° অক্ষাংশে যে ভূমি গঠনগুলি রয়েছে সেগুলিকেই মূলত হিমবাহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[17] হিমবাহগুলির সমাবেশ ইসমেনিয়াস ল্যাকাস চতুষ্কোণে অধিক লক্ষিত হয়।[2] মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের সাম্প্রতিক নক্সার ওপর ভিত্তি করে অনুমান করা হয় যে, মঙ্গলের মধ্য বিষুবীয় অঞ্চলে, উন্মুক্ত অবস্থায় বরফ সুস্থিত অবস্থাতে থাকতে পারে না।[18] এই কারণে অনুমান করা হয় যে, হয়ত হিমবাহগুলি পাথরকুঁচি বা ধুলোয় ঢাকা থাকার কারণে হিমবাহগুলির বরফ ঊর্দ্ধপাতনের ফলে বাষ্পীভূত হত না। [8][18][19] > এর থেকে এই ধারণাও করা হয় যে, ভৌগোলিক সাম্প্রতিক অতীতে মঙ্গল গ্রহের জলবায়ু সম্ভবত অন্যরকম ছিল, যে কারণে এই অক্ষাংশেও হিমবাহগুলি সুস্থিত অবস্থায় গড়ে উঠত। [17] এই ধারণা থেকে বেশ স্বতন্ত্র ভাবে একথাও প্রমাণিত হয় যে, সাম্প্রতিক অতীতে মঙ্গলের আক্ষিক আনতির লক্ষ্যনীয় ভাবে পরিবর্তন হয়েছে এবং যা মঙ্গলের কক্ষপথের নক্সায় নির্দেশিত হয়েছে। [17][20] মঙ্গলের বিষুবীয় অঞ্চলে এখনও অনেক আগ্নেয়গিরির চূড়ায় অতীতের হিমবাহের উপস্থিতির প্রমাণ দেখা যায়। [21][22][23]
পৃথিবীর হিমবাহগুলির মতো, মঙ্গলের হিমবাহগুলি কিন্তু বিশুদ্ধজলের বরফে তৈরি নয়।[1][10] এগুলির মধ্যে অনেকগুলিতেই প্রচুর পরিমাণে বাজে জঞ্জাল রয়েছে, এবং এদের মধ্যে বেশিরভাগকে পাথুরে হিমবাহ বলাই ভাল। [23][24][25] সেই কারণে বহু বছর, মঙ্গলের অবস্থানের গঠন নক্সা অনুযায়ী তার মধ্য-অক্ষীয় এলাকায় সুস্থিত জলের বরফ থাকা সম্ভব না, অথচ সেই এলাকায় এত হিমবাহ থাকার বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভূ-প্রকৃতি থাকায়, বিতর্কমূলক ধারণা প্রচলিত যে, মঙ্গলের বেশিরভাগ হিমবাহই হয়ত পাথুরে হিমবাহ। [26] যাইহোক, ইদানীং মঙ্গল কক্ষপথে পরিদর্শন-পরিক্রমাকারী যানে স্থিত শারাড রাডার যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ দ্বারা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, অন্তত কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকৃত জলের বরফের মতো, অর্থাৎ এগুলি প্রকৃত হিমবাহ। [6][8] কিছু বিশেষজ্ঞ লেখকের মতে, মঙ্গলের বিশেষ বিরল অবস্থাগত কারণে ঘনীভূত কারবন-ডাই-অক্সাইডের হিমবাহও তৈরী হয়েছে। [27] পৃথিবীর হিমবাহ যেমন পর্বত থেকে নির্গত হয়ে উপত্যকাতে নেমে আসে, মঙ্গলের কিছু ভূদৃশ্য তেমনই। কিছু অংশের মধ্যভাগে এমন গভীর অবতল আছে, যে মনে হয় হিমবাহগুলির সমস্ত বরফ মিলিয়ে গেছে আর যা পড়ে আছে তা অবক্ষিপ্ত ভূমি, হিমবাহ আনীত ধুলো ও জঞ্জাল।[28] এগুলি আল্পীয় হিমবাহের মতো অনুমান করা হয়, যাকে "গ্লেসিয়ার লাইক ফর্ম' (জি.এল.এফ) বা "গ্লেসিয়ার লাইক ফ্লো" (জি.এল.এফ) বলা হয়। [29] "গ্লেসিয়ার লাইক ফর্ম" সম্ভবত সঠিক পরিভাষা হবে এক্ষেত্রে, কারণ আমরা জানিনা এই গঠনগুলি এখনও চলমান কিনা। [30] আরেকটি পরিভাষা প্রায়ই সাহিত্যে ব্যবহার হয়, ভিসকাস ফ্লো ফিচার (ভি.এফ.এফ) বা সান্দ্রতা ধারা।[30]