দলিত
ভারতের একটি সম্প্রদায় / From Wikipedia, the free encyclopedia
দলিত শব্দের দ্বারা ভারত-এর এমন কিছু জাতিগত গোষ্ঠীকে বোঝানো হয় যারা সচরাচর নিপীড়িত এবং অনগ্রসর জাতিরূপে চিহ্নিত।[7] সংস্কৃত এবং হিন্দী ভাষায় দলিত শব্দের অর্থ হচ্ছে "ভগ্ন" বা "ছিন্নভিন্ন"। দলিতদের অনেকে হিন্দু ধর্মের চারি বর্ণ ব্যবস্থা থেকে আলাদা বলে এবং পঞ্চম বর্ণ হিসাবে দেখায়, যা পঞ্চমা নামেও পরিচিত। দলিতদের বেশিরভাগ বর্তমানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এছাড়া তারা বৌদ্ধ ধর্ম, শিখ ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম এবং বিভিন্ন লোকধর্ম সহ বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিশ্বাস করে। ভারতের ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে দলিতদের সংখ্যা ২০ কোটি যা ভারতের জনসংখ্যার ১৬%।[8]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
---|---|
ভারত | ২০.১৪ কোটি[1] (২০১১) |
বাংলাদেশ | ৬৫ লাখ[2] (২০১০) |
নেপাল | ৫০ লাখ[3] (২০১১) |
শ্রীলঙ্কা | ৫০ লাখ[4] (২০১১) |
পাকিস্তান | ৩০ লাখ (২০১১) |
যুক্তরাজ্য | ৫ লাখ[5] (২০১৩) |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | অজানা (২০১৩) |
কানাডা | ২.৫ লাখ[6] (২০১৩) |
মালয়েশিয়া | অজানা (২০১৩) |
সিঙ্গাপুর | অজানা (২০১৩) |
ভাষা | |
দক্ষিণ এশিয়ার ভাষা | |
ধর্ম | |
হিন্দু · শিখ · বৌদ্ধ · খ্রিস্টান · ইসলাম | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
ইন্দো আর্য, দ্রাবিড়, মুন্ডা |
দলিত শব্দটি ১৯৩৫ সালের আগেকার ব্রিটিশ রাজ-এর জনগণনার শ্রেণিবিভাজনের সময়ের অবহেলিত শ্রেণী বা ডিপ্রেসড ক্লাসের অনূদিত রূপ। অর্থনীতিবিদ এবং সংস্কারক ভীমরাও রামজি আম্বেডকর (১৮৯১-১৯৫৬) দলিত শব্দটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেন। তিনি জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত শোকগ্রস্ত লোককে দলিত সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করেন।[9] তার গঠন করা "লেবার পার্টি"-তে সমাজের নিম্ন শ্রেণীর সমস্ত লোককে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন যাদের মধ্যে মহিলা, ক্ষুদ্র কৃষক তথা অনগ্রসর শ্রেণীর লোকরা ছিল। আম্বেদকর নিজে একজন নিম্ন বর্ণের মহর সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। ১৯৭০ দশকে "দলিত" শব্দের ব্যবহার আবার জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন যখন 'দলিত পেন্থার' সমাজকর্মী গোষ্ঠী এর ব্যবহার করেছিল। ক্রমে ক্রমে রাজনৈতিক দলসমূহও নিজেদের লাভালাভের জন্য এই শব্দের ব্যবহার আরম্ভ করে। কানহাইয়া কুমার-এর মতে "দলিত" শব্দের সংজ্ঞা অধিক ব্যাপক, একজন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কৃষক যিনি অতি কষ্টে জীবন নির্বাহ করছেন তিনিও "দলিত" শ্রেণীতে পড়েন।[10][11]
ভারতের অনুসূচীত জাতির জাতীয় আয়োগে দলিত শব্দের সরকারি ব্যবহারকে "অসাংবিধানিক" আখ্যা দেন এবং 'অনুসূচীত জাতি' শব্দের ব্যবহারকে প্রধান্য দেন। পরে কিছু সূত্র অনুসারে দলিত শব্দ এমন কিছু জনগোষ্ঠীকে নিয়েছে যাদের সাংবিধানিকভাবে অনুসূচীত জাতির স্বীকৃত দেয়া হয়নি এবং সাধারণত একটি ভারতের নিপীড়িত লোকদের বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। নেপালেও এমন একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মহাত্মা গান্ধী ১৯৩৩ সালে সমাজে অস্পৃশ্য বলে বিবেচনা করা লোকদের হরিজন নামে নামকরণ করে।[12] হরিজনের অর্থ হচ্ছে হরি বা ভগবানের লোক। হরিজন শব্দটিকে ও পরে মর্যাদাহানিকর (derogatory) এবং অনুপালক (patronising) বলে অনেকে বিবেচনা করে । সেজন্য এই শব্দটি বর্তমানে তেমন ব্যবহার করা হয় না।[13] দলিত শব্দ ব্যবহারও কেরালা রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।[14]