পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্য
From Wikipedia, the free encyclopedia
পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্য ছিল ভারতের একটি আদি মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্য। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম দাক্ষিণাত্য মালভূমির অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে এই সাম্রাজ্যটি গড়ে উঠেছিল। এই কন্নড়িগ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল কল্যাণী (অধুনা কর্ণাটক রাজ্যের বিদার জেলার অন্তর্গত বাসবকল্যাণ)। রাজধানীর নামানুসারে এটিকে কখনও কখনও কল্যাণী চালুক্য সাম্রাজ্য, আবার খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর বাদামীর চালুক্য রাজবংশের সঙ্গে একটি তাত্ত্বিক সম্পর্কে নিরিখে ক্ষেত্রবিশেষে এটিকে পরবর্তী চালুক্য সাম্রাজ্য নামেও অভিহিত করা হয়। বেঙ্গি অঞ্চলের (অধুনা অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের পূর্ব গোদাবরী, পশ্চিম গোদাবরী ও কৃষ্ণা জেলা[5]) সমসাময়িক পূর্ব চালুক্য রাজবংশের সঙ্গে পার্থক্য প্রতিপাদনের জন্য এই রাজবংশটিকে "পশ্চিম চালুক্য" নামে অভিহিত করা হয়। পশ্চিম চালুক্যদের উত্থানের পূর্বে মান্যখেতের রাষ্ট্রকূট সম্রাটেরা দুই শতাব্দী কাল দাক্ষিণাত্য মালভূমি ও মধ্য ভারত শাসন করেছিলেন। ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলার সুযোগে মালবের পরমার রাজবংশের দ্বিতীয় তৈলপ সফলভাবে রাষ্ট্রকূট রাজধানী মান্যখেত আক্রমণ করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন বিজয়পুরের এক রাষ্ট্রকূট সামন্ত শাসক। নিজ অধিরাজবর্গকে পরাজিত করে তিনি মান্যখেতকে নিজের রাজধানী ঘোষণা করেন। এরপরে পশ্চিম চালুক্যেরা দ্রুত রাজ্যবিস্তার করতে থাকে এবং রাজা প্রথম সোমেশ্বরের শাসনকালেই এই রাজ্য একটি সাম্রাজ্যের রূপে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম সোমেশ্বরই কল্যাণীতে চালুক্য রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন।
পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
৯৭৩–১১৮৯[1] | |||||||||||||
১১২১ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম চালুক্য রাজবংশের বিস্তার[3] | |||||||||||||
অবস্থা | সাম্র্যাজ্য (৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যের অধীনস্থ) | ||||||||||||
রাজধানী | মান্যখেত, বাসবকল্যাণ | ||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | কন্নড়, সংস্কৃত | ||||||||||||
ধর্ম | হিন্দুধর্ম বৌদ্ধধর্ম[4] জৈনধর্ম | ||||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||||
রাজা | |||||||||||||
• ৯৫৭ – ৯৯৭ | দ্বিতীয় তৈলপ | ||||||||||||
• ১১৮৪ – ১১৮৯ | চতুর্থ সোমেশ্বর | ||||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||||
• প্রাচীনতম নথি | ৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ | ||||||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ৯৭৩ | ||||||||||||
• বিলুপ্ত | ১১৮৯[1] | ||||||||||||
|
দক্ষিণ ভারতের দুই সাম্রাজ্য কল্যাণীর চালুক্য ও তঞ্জাবুরের চোলেরা উর্বর বেঙ্গি অঞ্চলে আধিপত্য রক্ষার জন্য শতাধিক বছর ধরে পরস্পরের বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। বেঙ্গির পূর্ব চালুক্যেরা পারিবারিক সূত্রে পশ্চিম চালুক্যদের দূর সম্পর্কে জ্ঞাতিভ্রাতা হলেও চোলেদের সঙ্গে তাদের একটি বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। সেই কারণে পূর্বোক্ত যুদ্ধগুলিতে তারা চোলেদের পক্ষাবলম্বন করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ও দ্বাদশ শতাব্দীর গোড়ায় ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের শাসনকালে পশ্চিম চালুক্যেরা চোলদের প্রতিরোধ করতে বহুলাংশে সক্ষম হয় এবং উত্তরে উত্তরে নর্মদা নদী থেকে দক্ষিণে কাবেরী নদী পর্যন্ত প্রসারিত দাক্ষিণাত্যের অধিকাংশ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে।[6][7][8][9] পিতা প্রথম সোমেশ্বরের রাজত্বকালে যুবরাজ অবস্থায় ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের বিজয়াভিযান শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং পূর্ব ভারতের অধুনা বিহার ও বাংলা অঞ্চলেও তিনি সফলভাবে সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন।[10][11][12] এই পর্যায়ে দাক্ষিণাত্যের হৈসল, দেবগিরির সেউণ যাদব, কাকতীয় ও দক্ষিণের কল্যাণীর কলচুরি প্রভৃতি শাসক রাজপরিবার ছিল পশ্চিম চালুক্যদের অধীনস্থ সামন্ত শাসক। দ্বাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে পশ্চিম চালুক্যদের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার পর এই রাজপরিবারগুলি স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।
পশ্চিম চালুক্যেরা এমন একটি স্থাপত্যশৈলীর বিকাশ ঘটিয়েছিল যা বর্তমানে একটি পরিবর্তনমূলক শৈলী হিসেবে পরিচিত। এই শৈলীটি আদি চালুক্য রাজবংশের শৈলীর সঙ্গে পরবর্তীকালের হৈসল সাম্রাজ্যের স্থাপত্যশৈলীর মধ্যে একটি যোগসূত্রের কাজ করে। মধ্য কর্ণাটকের তুঙ্গভদ্রা নদী-তীরবর্তী জেলাগুলিতেই পশ্চিম চালুক্যদের অধিকাংশ স্থাপত্য নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায়। লক্কুণ্ডীর কাশীবিশ্বেশ্বর মন্দির, কুরুবত্তির মল্লিকার্জুন মন্দির, বাগলির কল্লেশ্বর মন্দির ও ইতগীর মহাদেব মন্দির এই স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদাহরণ। দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পকলার বিকাশেও পশ্চিম চালুক্যদের রাজত্বকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। পশ্চিম চালুক্য সম্রাটেরা মাতৃভাষা কন্নড় ও সংস্কৃত উভয় ভাষাতেই সাহিত্য রচনায় উৎসাহ দিতেন বলে এই যুগে সাহিত্যের ক্ষেত্রেও বিশেষ উন্নতি ঘটেছিল।