পৃথিবী
সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ / From Wikipedia, the free encyclopedia
পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য হতে এটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কি.মি।এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম "বিশ্ব" বা "নীলগ্রহ"। ইংরেজি ভাষায় পরিচিত আর্থ (Earth) নামে, গ্রিক ভাষায় পরিচিত গাইয়া (Γαῖα)[n 5] নামে, লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম "টেরা (Terra)। [25]
বিবরণ | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বিশেষণ | পার্থিব | ||||||||||||
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য | |||||||||||||
যুগ জে২০০০[n 1] | |||||||||||||
অপসূর | ১৫২,১০০,০০০ কিমি[n 2] (৯৪,৫০০,০০০ মাইল; ১.০১৬৭৩ এইউ) | ||||||||||||
অনুসূর | ১৪৭,০৯৫,০০০ কিমি (৯১,৪০১,০০০ মাইল; ০.৯৮৩ ২৭ এইউ) [n 2] | ||||||||||||
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ | ১৪৯,৫৯৮,০২৩ কিমি[2] (৯২,৯৫৫,৯০২ মাইল; ১.০০০ ০০১ ০২ এইউ) | ||||||||||||
উৎকেন্দ্রিকতা | ০.০১৬ ৭০৮৬[2] | ||||||||||||
কক্ষীয় পর্যায়কাল | ৩৬৫.২৫৬ ৩৬৩ ০০৪ দিন[3] (১.০০০ ০১৭ ৪২০ ৯৬ বছর) | ||||||||||||
গড় কক্ষীয় দ্রুতি | ২৯.৭৮ কিমি/সে[4] (১০৭,২০০ কিমি/ঘ) | ||||||||||||
গড় ব্যত্যয় | ৩৫৮.৬১৭° | ||||||||||||
নতি | ৭.২৫° সৌর বিষুবরেখার সাথে ১.৫৭৮৬৯°[5] স্থির তলের সাথে ০.০০০০৫° জে২০০০ সৌর কক্ষপথের সাথে | ||||||||||||
উদ্বিন্দুর দ্রাঘিমা | -১১.২৬০ ৬৪°[4] | ||||||||||||
অনুসূরের উপপত্তি | ১১৪.২০৭ ৮৩°[4] | ||||||||||||
উপগ্রহসমূহ | ১ টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ (চন্দ্র); ৫টি আপাতদৃষ্টিতে উপগ্রহ >১ ৮০০ কার্যরত কৃত্রিম উপগ্রহ[6] >১৬ ০০০ মহাকাশের জঞ্জাল[n 3] | ||||||||||||
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |||||||||||||
গড় ব্যাসার্ধ | ৬৩৭১.০ কিমি (৩৯৫৮.৮ মাইল)[7] | ||||||||||||
বিষুবীয় ব্যাসার্ধ | ৬,৩৭৮.১ কিমি (৩৯৬৩.২ মাইল) [8][9] | ||||||||||||
মেরু ব্যাসার্ধ | ৬,৩৫৬.৮ কিমি (৩৯৪৯.৯ মাইল) [10] | ||||||||||||
সমরূপতার | ০.০০৩৩৫২৮ [11] ১/২৯৮.২৫৭২২২১০১ ইটিআরএস৮৯ | ||||||||||||
পরিধি | ৪০০৭৫.০১৭ কিমি নিরক্ষরেখা বরাবর (২৪৯০১.৪৬১ মাইল) ৪০০০৭.৮৬ কিমি পৃথিবীর মধ্যরেখা বরাবর (২৪৮৫৯.৭৩ মাইল)[12][13] | ||||||||||||
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল | ৫১০,০৭২,০০০ কিমি২ (১৯৬ ৯৪০ ০০০ মাইল২)[14][15][n 4] ১৪৮ ৯৪০ ০০০ কিমি২ ভূমি (৫৭৫ ১০০ ০০ বর্গমাইল; ২৯.২%) ৩৬১ ১৩২ ০০০ কিমি২ পানি (১৩৯ ৪৩৪ ০০০ বর্গ মাইল; ৭০.৮%) | ||||||||||||
আয়তন | ১.০৮৩ ২০৭ ৩×১০১২ কিমি৩ (২.৫৯৮ ৭৬ × ১০১১ কিউবিক মাইল)[4] | ||||||||||||
ভর | ৫.৯৭ ২৩৭×১০২৪ কিলোগ্রাম ১.৩১ ৬৬৮ × ১০২৫ পাউন্ড)[16] (৩.০×১০−৬ M☉) সৌর ভর | ||||||||||||
গড় ঘনত্ব | ৫.৫১৪ গ্রাম/সেমি৩[4] (০.১৯৯২ পাউন্ড/কিউবিক ইঞ্চি) | ||||||||||||
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ | ৯.৮০৭ মি/সে২ (৩২.১৮ ফিট/সে২)[17] | ||||||||||||
মুক্তি বেগ | ১১.১৮৬ কিমি/সে [4] (৪০ ২৭০ কিমি/ঘণ্টা; ২৫ ০২০ মাইল/ঘণ্টা) | ||||||||||||
নাক্ষত্রিক ঘূর্ণনকাল | ০.৯৯৭ ২৬৯ ৬৮ দিন;[18] (২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪.১০০ সেকেন্ড) | ||||||||||||
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ | ০.৪৬৫১ কিমি/সে[19] (১৬৭৪.৪ কিমি/ঘণ্টা; ১০৪০.৪ মাইল/ঘণ্টা) | ||||||||||||
অক্ষীয় ঢাল | ২৩.৪৩৯ ২৮১১° [3] | ||||||||||||
উত্তর মেরুর বিষুবাংশ | অসংজ্ঞায়িত° | ||||||||||||
উত্তর মেরুর বিষুবলম্ব | +৯০° | ||||||||||||
প্রতিফলন অনুপাত | ০.৩৬৭ জ্যামিতিক[4] ০.৩০৬ বন্ড[4] | ||||||||||||
| |||||||||||||
বায়ুমণ্ডল | |||||||||||||
পৃষ্ঠের চাপ | ১০১.৩২৫ কিলো প্যাসকেল (সমুদ্র সমতলের ক্ষেত্রে) | ||||||||||||
গঠন | ৭৮.০৮% নাইট্রোজেন (N2; শুষ্ক বাতাসের ক্ষেত্রে)[4] ২০.৯৫% অক্সিজেন (O2) ০.৯৩% আর্গন ০.০৪০২% কার্বন ডাই অক্সাইড[23] ~১% জলীয় বাষ্প (জলবায়ু পরিবর্তনশীল) | ||||||||||||
পৃথিবী হলো মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবী এখন পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত।[26] ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে।[27] পৃথিবীর জীবমণ্ডল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বায়ুজীবী জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজন স্তর গঠিত হয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে একযোগে এই ওজোন স্তরই ক্ষতিকর সৌর বিকিরণের গতিরোধ করে গ্রহের বুকে প্রাণের বিকাশ ঘটার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে।[28] পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও কক্ষপথ এই যুগে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবী প্রাণধারণের সহায়ক অবস্থায় থাকবে।[29]
পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। এগুলিকে ভূত্বকীয় পাত বলা হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এগুলি পৃথিবীর উপরিতলে এসে জমা হয়েছে। পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত।[30] অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ ও অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে। স্থলভাগেও রয়েছে অজস্র হ্রদ ও জলের অন্যান্য উৎস। এগুলি নিয়েই গঠিত হয়েছে বিশ্বের জলভাগ। জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তরল জল এই গ্রহের ভূত্বকের কোথাও সমভার অবস্থায় পাওয়া যায় না। পৃথিবীর মেরুদ্বয় সর্বদা অ্যান্টার্কটিক বরফের চাদরের কঠিন বরফ বা আর্কটিক বরফের টুপির সামুদ্রিক বরফে আবৃত থাকে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সর্বদা ক্রিয়াশীল। এই অংশ গঠিত হয়েছে একটি আপেক্ষিকভাবে শক্ত ম্যান্টেলের মোটা স্তর, একটি তরল বহিঃকেন্দ্র (যা একটি চৌম্বকক্ষেত্র গঠন করে) এবং একটি শক্ত লৌহ আন্তঃকেন্দ্র নিয়ে গঠিত।
মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে মোটামুটি ৩৬৫.২৬ সৌর দিনে[n 6] বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।[31] পৃথিবী নিজ অক্ষের ৬৬.১/২ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। এর ফলে এক বিষুবীয় বছর (৩৬৫.২৪ সৌরদিন) সময়কালের মধ্যে এই বিশ্বের বুকে ঋতুপরিবর্তন ঘটে থাকে।[32] পৃথিবীর একমাত্র বিদিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ। ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল। চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে। চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে। ৩.৮ বিলিয়ন থেকে ৪.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী সময়ে পরবর্তী মহাসংঘর্ষের সময় একাধিক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে গ্রহের উপরিতলের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।
গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে। এই সকল রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক, পর্যটন, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মানব সংস্কৃতি গ্রহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার জন্মদাতা। এই সব ধারণার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীকে দেবতা রূপে কল্পনা, সমতল বিশ্ব কল্পনা এবং পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্ররূপে কল্পনা। এছাড়া একটি সুসংহত পরিবেশ রূপে বিশ্বকে কল্পনা করার আধুনিক প্রবণতাও লক্ষিত হয়। এই ধারণাটি বর্তমানে প্রাধান্য অর্জন করেছে।