দুর্গা
হিন্দু দেবী পার্বতীর একটি উগ্র রূপ / From Wikipedia, the free encyclopedia
দুর্গা (সংস্কৃত: दुर्गा; অর্থাৎ "যিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন"; এবং "যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন")[1] হলেন হিন্দু দেবী পার্বতীর এক উগ্র রূপ। হিন্দু সংস্কৃতিতে তিনি জনপ্রিয় এক দেবী। তাঁকে আদ্যাশক্তির রণরঙ্গিনী এক মহাদেবীর রূপ বলে মান্য করেন। তিনি চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহন্ত্রী, নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী, দাক্ষায়ণী, অদ্রিজা, নগনন্দিনী, সিংহবাহিনী, শারদা, আনন্দময়ী ইত্যাদি নামেও পরিচিতা। দুর্গার বাহুসংখ্যা অনেক। তাঁর সহস্রভুজা, ত্রিংশতিভুজা, বিংশতিভুজা, অষ্টাদশভুজা, ষোড়শভুজা, দশভুজা, অষ্টভুজা ও চতুর্ভুজা মূর্তির উল্লেখ পুরাণ গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায় বা বিভিন্ন স্থাপত্য-ভাস্কর্যে দেখা যায়। তবে দশভুজা রূপটিই সমধিক জনপ্রিয়। তাঁর বাহন সিংহ (উত্তর ও পশ্চিমভারতে আঞ্চলিকভাবে বাঘ)। মহিষাসুরমর্দিনী-মূর্তিতে তাঁকে মহিষাসুর নামে এক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়। তাঁর অনেক রূপ, যার মধ্যে কালী রূপটি অন্যতম জনপ্রিয়।
দুর্গা | |
---|---|
শক্তি এবং সুরক্ষার দেবী | |
অন্যান্য নাম | আদি শক্তি, মহিষাসুর মর্দিনী, ভগবতী, ভবানী, জগদম্বা |
দেবনাগরী | दुर्गा |
অন্তর্ভুক্তি | মহাদেবী, আদ্যাশক্তি, পার্বতী, মহাকালী |
আবাস | মণিদ্বীপ, কৈলাস |
মন্ত্র | "সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে, শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরি নারায়নী নমস্তুতে" |
অস্ত্র | ত্রিশূল, খড়্গ, চক্র, গদা, শঙ্খ, শক্তি, ঢাল বা খেটে, বাণ এবং ধনুক, ঘণ্টা, পরশু, নাগপাশ |
দিবস | শুক্রবার |
বাহন | সিংহ (কেশরী) |
গ্রন্থসমূহ | দেবীভাগবত পুরাণ, দেবীমাহাত্ম্যম্, কালিকা পুরাণ, শাক্ত উপনিষদ, তন্ত্র |
উৎসব | দুর্গা পূজা, দুর্গা অষ্টমী, নবরাত্রি, বিজয়াদশমী, বাথুকাম্মা, তীজ, কালী পূজা |
দুর্গা শব্দের অনুবাদসমূহ | |
---|---|
বাংলা | দুর্গা |
সংস্কৃত | दुर्गा |
গুজরাটি | દુર્ગા |
হিন্দি | दुर्गा |
ভোজপুরি | 𑂠𑂴𑂩𑂳𑂏𑂰 (দুরুগা) |
কন্নড় | ದುರ್ಗಾ |
মালয়ালম | ദുർഗ |
মারাঠি | दुर्गा |
নেপালি | दुर्गा |
ওড়িয়া | ଦୁର୍ଗା |
পাঞ্জাবি | ਦੁਰਗਾ |
তামিল | துர்க்கை (তুর্ক্কই) |
তেলুগু | దుర్గ |
হিন্দুধর্মের প্রবেশদ্বার |
সনাতন ধর্মে দেবী দুর্গা পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ।[2] তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতীর উগ্র রূপ, কার্তিক ও গণেশের জননী, এবং কালীর অন্যরূপ। বাংলা মঙ্গলকাব্য গুলোতে এবং আগমনী গানে দুর্গারূপে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর সপরিবারে পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলোর (দুর্গাপূজা) এবং তাঁর বিবাহিত জীবনের অপূর্ব বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাদেবী দেবতাদের অনুরোধে দুর্গম অসুরকে বধ করেন তাই দেবী পার্বতী দুর্গা নামে অভিহিত হন।
দুর্গার আরাধনা বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ), আসাম, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের কোনো কোনো অঞ্চলে প্রচলিত। ভারতের অন্যত্র দুর্গাপূজা মূলত নবরাত্রি ব্রত রূপে উদযাপিত হয়। বছরে দুইবার দুর্গোৎসবের প্রথা রয়েছে – আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দুর্গাপূজা। সম্ভবত খ্রিস্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলায় দুর্গোৎসব প্রবর্তিত হয়। জনশ্রুতি আছে, রাজশাহীর তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম সাড়ম্বরে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন এবং তারপর নেত্রকোনা জেলার, মেন্দিপুর গ্রামের মঠবাড়িতে দূর্গা পূজার সূচনা হয়।