শাক্ত উপনিষদ
From Wikipedia, the free encyclopedia
শাক্ত উপনিষদ হল হিন্দুধর্মের কয়েকটি গৌণ উপনিষদের একটি বিশেষ শ্রেণী। উপনিষদগুলিতে শাক্ত ধর্মতত্ত্ব আলোচিত এবং আদি পরাশক্তিকে (দেবী বা মহাশক্তি) বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সত্ত্বার স্থান দেওয়া হয়েছে।[1][2] মুক্তিকা-সংকলনের ১০৮টি উপনিষদের তালিকায় মোট ৮টি শাক্ত উপনিষদের নাম উল্লিখিত হয়েছে।[3] উল্লেখ্য, এই ১০৮টি উপনিষদের মধ্যে মাত্র ১৩টি মুখ্য উপনিষদকে প্রাচীন বৈদিক দর্শনের অঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হয়। ওই ১৩টি উপনিষদকে বলা হয় মুখ্য উপনিষদ। অন্যান্য উপনিষদগুলিকে বলা হয় গৌণ উপনিষদ। শাক্ত উপনিষদগুলিও শ্রেণীগতভাবে অন্যান্য গৌণ উপনিষদগুলির ন্যায় মুখ্য উপনিষদগুলির থেকে পৃথক স্থানের অধিকারী।[4]
গৌণ উপনিষদগুলি বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত। এই শ্রেণীগুলির সঙ্গে শাক্ত উপনিষদগুলির মতপার্থক্য লক্ষিত হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, সামান্য উপনিষদগুলি হিন্দুধর্মের সন্ন্যাস প্রথার উপর গুরুত্ব আরোপ করে, যোগ উপনিষদগুলির সম্পর্ক হিন্দু যোগ দর্শনের সঙ্গে এবং শৈব ও বৈষ্ণব উপনিষদগুলি যথাক্রমে শৈবধর্ম ও বৈষ্ণবধর্মের প্রবক্তা।[4][5]
শাক্ত উপনিষদগুলি ভারতে মধ্যযুগে রচিত। এগুলি সর্বাপেক্ষা আধুনিক গৌণ উপনিষদগুলির অন্যতম। এই ৮টি উপনিষদ হিন্দুধর্মে দেবী-উপাসনা ও তন্ত্র-সংক্রান্ত ধর্মতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র।[6][7] কয়েকটি শাক্ত উপনিষদের একাধিক পাঠান্তরও পাওয়া যায়।[8][9]
শাক্ত উপনিষদগুলির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, এই উপনিষদগুলিতে নারীশক্তিকে সর্বোচ্চ সত্ত্বা বা ঈশ্বরের মর্যাদা দান করা হয়েছে এবং ব্রহ্ম ও আত্মা নামে পরিচিত অধিবিদ্যামূলক দু’টি হিন্দু ধারণার আদি কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[10][11] জুন ম্যাকড্যানিয়েলের মতে, হিন্দু দর্শনের সাংখ্য ও অদ্বৈত বেদান্ত শাখা দু’টির সমন্বয়ে শাক্ত উপনিষদগুলির দার্শনিক ভিত্তিটি স্থাপিত। এই বিশেষ দার্শনিক মতটি এই কারণেই শাক্তদ্বৈতবাদ (আক্ষরিক অর্থে, একেশ্বরবাদী শাক্তধর্মের পথ) নামে পরিচিত।[12]